নির্মাণব্যয় উঠে আসার পরও সেতুতে টোল আদায়, প্রতিবাদ চট্টগ্রামবাসীদের

চট্টগ্রাম শাহ আমানত সেতুতে টোল নেয়া হচ্ছে | ছবি: এখন টিভি
0

কর্ণফুলী নদীর ওপর নির্মিত চট্টগ্রাম শাহ আমানত সেতুতে বাড়তি টোল আদায়ের প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে স্থানীয়রা। তারা বলছেন, ১৫ বছর আগে নির্মিত এ সেতু নির্মাণে খরচ হয়েছে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা, এ পর্যন্ত সরকার টোল আদায় করেছে প্রায় হাজার কোটি টাকা। নির্মাণ ব্যয় উঠে আসার পরও টোল প্রত্যাহার না হয়ে, উল্টো বাড়ছে।

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর উপর নির্মিত শাহ আমানত সেতু। দক্ষিণ চট্টগ্রাম, পর্যটন নগরী কক্সবাজার ও বান্দরবানের সঙ্গে সারা দেশের সংযোগ ধমনী। এ গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রেই যখন শত শত গাড়ির সারি তৈরি হয়, তখন থমকে দাঁড়ায় জীবন, শুরু হয় দীর্ঘ অপেক্ষা।

টোল আদায়কে কেন্দ্র করে সেতু এলাকাটিতে যানজটের ভোগান্তি প্রতিদিনের। আটকে থাকে যাত্রী, রোগী ও পণ্যবাহী গাড়ি। প্রশ্ন হচ্ছে? একটি সেতু তৈরির পর টোল আদায়ের নিয়ম কেমন? এটি কতদিনই বা করা যাবে টোল আদায়? অনন্তকালই কি টোল দিতে থাকবে সাধারণ মানুষ? টোলের হারই বা কীভাবে কমবে - বাড়বে?

২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে ৯৫০মিটার দৈর্ঘ্যের এ সেতু গাড়ি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। সেতুটি দিয়ে কয়েক লাখ মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করে। চালুর ১৫ বছরে সেতুটি দিয়ে যান চলাচল কয়েক গুণ বেড়েছে। প্রতিদিন গড়ে ২৫ লাখ টাকার টোল আদায় হয় সেতুতে। সেই হিসেবে এখন পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা টোল আদায় হওয়ার কথা। অথচ সেতু নির্মাণে খরচ হয়েছে ৫৯৫ কোটি টাকা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদেশ থেকে নেয়া ঋণ পরিশোধ ও নির্মাণ ব্যয় উঠে আসলে টোল হার কমার কথা, কিন্তু শাহ আমানত সেতুর ক্ষেত্রে তা উল্টো বাড়ছে।

আরও পড়ুন:

মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট জিয়া হাবীব আহসান বলেন, ‘এক লাখ হলেও তো অনেক টাকা হয় প্রতিদিন। আর টোলের পয়সা ব্রিজের পয়সা তো উঠে গেছে। বিদেশি সাহায্য আছে। যারা আমাদের জনগণদের উপহার দিয়েছে। এর আগেও একটি ব্রিজ ডেনমার্ক দিয়েছে। এসব দিক বিবেচনা করে এতো টোল কোনোভাবে মানা যায় না।’

সেতুটি টোল মুক্ত করার দাবিতে এরইমধ্যে মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশসহ সংবাদ সম্মেলন করেছে স্থানীয়রা। তাদের মতে, আইন অনুসারে শাহ আমানত সেতু টোল মুক্ত করা সম্ভব। দক্ষিণ চট্টগ্রামে নগরায়ন, শহরের বিস্তার ও বিনিয়োগে বড় বাধা এ সেতুর টোল।

কর্ণফুলী উপজেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক এস এম ফোরকান বলেন, ‘দৈনিক চলার পথে আমাদের যদি একাধিকবার টোল দিতে হয়, তাহলে কি এটি আমাদের সংবিধান বিরোধী নয়? অন্যায় নয়? এটির থেকে আমরা অবসান চাচ্ছি।’

স্থানীয়দের একজন বলেন, ‘আমি মনে করি এ ব্রিজ থেকে যে টাকা উঠেছে তা থেকে সরকারের দুই তিনটি ব্রিজ হয়ে যাবে। দিন দিন যানজটের পরিমাণ আরও বাড়ছে এ টোলের কারণে।’

চালকেরা জানান, টোলের জন্য রাস্তায় যানজট হয়। টাকা উঠে গেছে টোল থেকে। এখন টোল বন্ধ করে দেয়ার দাবি করে চালকদের।

সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, সেতুর রক্ষণাবেক্ষণসহ খরচের পাশাপাশি রাজস্ব আদায়ের জন্য টোল আদায় করে সরকার।

চট্টগ্রাম সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মোসলেহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘সরকারের একটি রেভিনিউ জেনারেশনের পয়েন্ট এটি। তাই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। আমরা জানি টোল ফ্রি করার ব্যাপারে একটি মুভমেন্ট হচ্ছে। তো আমরা ওই পজিশনে নেই যে টোল বন্ধ করতে পারব। যেহেতু এটি সরকারের একটি আর্নিং পয়েন্ট তাই সরকারই সিদ্ধান্ত নেবে।’

টোল প্রত্যাহারের দাবিতে আগামী ১ থেকে ১৫ নভেম্বর গণস্বাক্ষর কর্মসূচির পাশাপাশি দাবি আদায়ে চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচি দেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্থানীয়রা।

এফএস