বর্ধিত মাশুল নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর ও ব্যবসায়ীদের টানাপোড়েন, বন্ধের হুমকি পোর্ট ইউজার ফোরামের

চট্টগ্রাম বন্দর
চট্টগ্রাম বন্দর | ছবি: এখন টিভি
2

বর্ধিত মাশুল কার্যকর নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিরোধ তীব্র হচ্ছে। নতুন হারে মাশুল আদায় স্থগিত রেখে সবার সাথে আলোচনা করে যৌক্তিক হারে বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছে চিঠি দিয়েছেন বন্দর ব্যবহারকারীদের সংগঠন পোর্ট ইউজার ফোরাম। সরকার এতে সাড়া না দিলে বন্দরের কার্যক্রম বন্ধের মতো কর্মসূচি দেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে সংগঠনটি।

বন্দর ব্যবহারকারীদের আপত্তি সত্ত্বেও এক মাস স্থগিত রাখার পর ৫৬টি সেবার বিপরীতে গড়ে ৪১ শতাংশ হারে অতিরিক্ত মাশুল আদায় করছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

গত ১৪ অক্টোবর প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে বর্ধিত মাশুলের হার যৌক্তিক করা এবং বর্তমান সংকটে একযোগে ৪১ শতাংশ না বাড়িয়ে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। যদিও বাণিজ্য সংগঠনগুলোর মতামত ও অনুরোধ উপেক্ষা করে মাশুলের নতুন রেইট বহাল রেখেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় বর্ধিত মাশুল আদায় স্থগিত করতে প্রধান উপদেষ্টার দ্বারস্থ হয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দর দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি। তড়িঘড়ি করে বিপুল অঙ্কের মাশুল চাপিয়ে দিলে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে দেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য মুখ থুবড়ে পড়বে। এক্ষেত্রে সব পক্ষের সাথে আলোচনা করে মাশুল নির্ধারণের আগ পর্যন্ত বর্ধিত হার কার্যকর না করার অনুরোধ করে চিঠি দিয়েছে পোর্ট ইউজার ফোরাম।

বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি নাসিরুদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘কম্পিটিটিভ স্টেজটা হারাচ্ছে। ভিয়েতনামের সঙ্গে কম্পিট করতে হচ্ছে, চায়নার সঙ্গে কম্পিট করতে হচ্ছে। ওইসব দেশের থেকেও এখন আমাদের চিটাগং পোর্টটা এক্সপেনসিভ হয়ে যাচ্ছে। ১২ ধরনের একটা এক্সপোর্ট বাস্কেট যেটা ৮৫ শতাংশ কন্ট্রিবিউট করছে। এ ধরনের একটা সেক্টরকে সরাসরি আঘাত করা হচ্ছে। বিনীত নিবেদন হচ্ছে এটা আপাতত স্থগিত রেখে স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে ধারাবাহিক মিটিং করে একটা যৌক্তিক সিদ্ধান্তে আসা দরকার।’

আরও পড়ুন:

চট্টগ্রাম কাস্টমস এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু বলেন, ‘এটা পালন করতে গিয়ে আমরা হয়তো আমার ক্লায়েন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এটা দেখবো কিন্তু আমাদের করার কিছু থাকবে না। তাই আমরা সরকারের সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে আবেদন জানাবো এটি পুনর্বিবেচনা করার জন্য। এটি কার্যকর করার সময় আরেকটু বৃদ্ধি করে দেয়ার জন্য।’

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বিদেশি অপারেটরকে টার্মিনাল দিতে তাদের স্বার্থে মাশুল বাড়ানো হচ্ছে। এতে কনটেইনার প্রতি আমদানি রপ্তানি পণ্য পরিবহনে খরচ বাড়বে ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা। যা বহন করতে হবে ভোক্তাকেই। সরকার মাশুল স্থগিতের আহ্বানে সাড়া না দিলে বন্দরে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কার্যক্রম বন্ধের মতো কর্মসূচি দিতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে পোর্ট ইউজার ফোরাম।

পোর্ট ইউজার ফোরামের আহ্বায়ক আমির হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘পোর্টে দুই থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকা প্রতি বছর লাভ করে। তাহলে আমার সমস্যাটা কোথায়, কেন বাড়াতে হবে? এটা কি সম্ভব? এটা হয় কোনো দেশে এক লাফে ৪১ শতাংশ ট্যারিফ বাড়ানো? কার স্বার্থে বাড়ানো হচ্ছে এগুলো?’

বন্দরে প্রবেশের গেইট পাস ও ট্রাক ও কাভারড ভ্যানের পাসের ফি প্রায় ৫ গুণ বাড়ানোয় ক্ষুব্ধ পরিবহন মালিকরা। বিনা নোটিশে হুট করে নেয়া এই সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে প্রয়োজনে বন্দর থেকে পণ্য পরিবহন বন্ধ রাখার হুমকি দিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।

ট্রাক প্রাইমমুভার পণ্য পরিবহন মালিক সমিতির বন্দর বিষয়ক সম্পাদক মো. শামসুজ্জামান সুমন বলেন, ‘দৈনিক আমাদের ১০ হাজারের বেশি গাড়ি বন্দরে ঢুকে। সে জায়গায় যদি আপনাদের আমরা ৫৭ টাকা ৫৫ পয়সা রেভিনিউ দিয়ে থাকি ঢোকার জন্য, আমরা সরকারকে সহযোগিতা করি। আমরা আশা করবো আপনারা টাকার পরিমাণ পূর্বেরটাই রাখবেন অন্যথায় আমরা আমাদের গাড়ি বন্দরে প্রবেশ করাবো না।’

এদিকে প্রজ্ঞাপন জারির পর তিন মাস সময় না দিয়ে বর্ধিত মাশুল কার্যকর করা বে-আইনি ও দেশের স্বার্থ পরিপন্থী দাবি করে প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছে বাংলাদেশ মেরিটাইম ল সোসাইটি।

ইএ