মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা বিষয়ক পরিকল্পনার প্রথম ধাপে বুধবার সম্মত হয় গাজার শাসকদল হামাস ও ইসরাইল। তুরস্ক, মিশর ও কাতারসহ আঞ্চলিক শক্তিগুলোর চাপ ছিল হামাসের ওপর; একইভাবে ইসরাইলকে আলোচনার টেবিলে বসতে বাধ্য করে যুক্তরাষ্ট্র।
গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন বন্ধে চাপ দেয়া এসব দেশ আগ্রহী নিজ স্বার্থেই। যেমন, তুরস্কের সামরিক আধুনিকায়নের আগ্রহ আর রাজধানী দোহায় ইসরাইলের গেলো মাসের হামলার পর কাতারের জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ। বাস্তবতা এমন হলেও যুদ্ধে সমাপ্তির সম্ভাবনা অনেক দূরের বিষয়, বলছেন বিশ্লেষকরা।
আটলান্টিক কাউন্সিলের রিঅ্যালাইন ফর প্যালেস্টাইন পরিচালক আহমেদ ফুয়াদ আল-খতিব বলেন, ‘এটি মূলত একের ভেতরে দু'টি চুক্তি। প্রথমটি হল যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি ও বন্দি বিনিময়। দ্বিতীয়টি গাজার ভবিষ্যৎ এবং গাজার শাসনব্যবস্থা, পরিবর্তন ও নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ক। দীর্ঘ ও জটিল আলোচনার পর ইসরাইলি জিম্মি আর ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা এসেছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে বলতে চাই যে যুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি এবং এই ধাপ শেষে কী ঘটবে তা আমরা জানি না।’
চুক্তির প্রথম ধাপ, অর্থাৎ জিম্মি ও বন্দি বিনিময় সম্পন্নে ৭২ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। চলছে গাজা থেকে ইসরাইলের সেনা প্রত্যাহারের প্রস্তুতিও। কিন্তু ইসরাইলি জিম্মিরা ফিরলেও ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তির শর্তে যেকোনো অজুহাতে শেষ পর্যন্ত ফের বিশ্বাসঘাতকতা করবেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী, এমনটাই মত বিশ্লেষকদের। বলছেন, কোনো অবস্থাতেই বিশ্বাস করার সুযোগ নেই বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুকে।
আরও পড়ুন:
আল-জাজিরার জ্যেষ্ঠ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মারওয়ান বিশারা বলেন, ‘ইসরাইল যে এরই মধ্যে চুক্তি লঙ্ঘন করতে শুরু করেছে, এ নিয়ে সন্দেহ নেই। সামনের দিনগুলোতে দেশটির দুরভিসন্ধি নিয়েও কোনো সন্দেহ নেই। শুরু থেকেই ইসরাইলকে অগ্রাধিকার দেয়া চুক্তি এটি। ট্রাম্প প্রশাসনের খসড়া চুক্তি সংশোধনের সুযোগ পেয়েছে ইসরাইল, যেখানে অন্ধকারে রাখা হয়েছে ফিলিস্তিনিদের। তখন থেকেই ইসরাইল প্রতিশ্রুতি রক্ষা করছে না। ফলে যেকোনো সময় চাইলেই ফের যুদ্ধ শুরুর শঙ্কা বা সক্ষমতা দেশটির আছে। একটা বিষয়ই আমরা নিশ্চিতভাবে জানি যে নেতানিয়াহুকে বিশ্বাস করা যায় না।’
হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, রোববার মধ্যপ্রাচ্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সোমবার ইসরাইলি পার্লামেন্ট নেসেটে বক্তব্য দিয়ে যাবেন মিশরে। সেখানে ট্রাম্পের উপস্থিতিতেই হবে চুক্তি সই। পুরো আয়োজনে জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, ইতালি, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জর্ডান, তুরস্ক, সৌদি আরব, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া থাকলেও থাকবে না সংঘাতরত ইসরাইল বা ফিলিস্তিনের কোনো প্রতিনিধি। একইদিন হওয়ার কথা ইসরাইল-হামাস জিম্মি ও বন্দি বিনিময়। কিন্তু তারপরের পদক্ষেপ কী, অস্ত্র-বিরতি চুক্তির বাকি অংশের বাস্তবায়ন- সবকিছুই ধোঁয়াশায়। বিশ্লেষকরা বলছেন, আগ্নেয়াস্ত্রের নীরবতা মানে শান্তি নয়, অবরোধে ইতি টানা ছাড়া গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।
আল-জাজিরার জ্যেষ্ঠ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মারওয়ান বিশারা বলেন, ‘এ পুরো প্রক্রিয়া যে সঠিক পথে চলবে, তার নিশ্চয়তা দরকার। সঠিক পথের অর্থ হলো অবরোধের অবসান, ফিলিস্তিনি জনতার রাষ্ট্রের অধিকার, একটি দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান এবং এ সময়ে দাঁড়িয়ে যখনই সম্ভব হোক না কেন, শেষ পর্যন্ত যেন ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন জীবন নিশ্চিত হয়, সে সবকিছু নিশ্চিত করা।’
শোনা যাচ্ছে, অস্ত্র-বিরতি চুক্তির বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণে কাতার, মিশর, তুরস্কসহ কয়েকটি দেশের জয়েন্ট টাস্ক ফোর্সের অংশ হবে ২শ' মার্কিন সেনা কর্মকর্তাও। যদিও গাজার ভেতরে প্রবেশ করবেন না তারা।





