গাজায় নৌ অবরোধ ভাঙতে এবং অবরুদ্ধ অঞ্চলে ফিলিস্তিনিদের কাছে ত্রাণ পৌঁছানোর লক্ষ্যে যাত্রা করা ৪৪ বেসামরিক নৌযানের সবগুলোকেই আটকে দিয়ে, বুধবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত গ্রেপ্তার করে সেখানে থাকা, অর্ধশতাধিক দেশের সাড়ে ৪০০ এর বেশি অধিকারকর্মীকে, তাদের রাখা হয় কারাগারে।
সোমবার পর্যন্ত পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গসহ নয় সুইডিশ, ২৮ জন ফরাসি, ২৭ গ্রিক, ১৫ ইতালীয়সহ বিভিন্ন দেশের ১৭০ জনের বেশি অধিকারকর্মী ইসরাইল ছাড়ছেন বা ছেড়েছেন, যারা ছিলেন গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলায়। অনেকে এরই মধ্যে পৌঁছে গেছেন নিজ দেশে। থুনবার্গকে চুল টেনেহিঁচড়ে ইসরাইলি পতাকায় চুমু খেতে বাধ্য করার পর, এবার নৌবহরে থাকা অন্যান্য অধিকারকর্মীদের সাথেও ব্যাপক অসদাচরণের অভিযোগ দখলদার ইসরাইলের বিরুদ্ধে।
ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনীর তুচ্ছতাচ্ছিল্য থেকে বাদ যাননি দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার দৌহিত্র মান্ডলা ম্যান্ডেলা, এমনকি ইউরোপীয় কয়েকজন আইনপ্রণেতাও। রোমে পৌঁছানোর পর ইতালীয় অধিকারকর্মীরা জানান, বিনা অপরাধে গ্রেপ্তারের পর থেকে তাদের সাথে পশুর মতো আচরণ করে ইসরাইলি সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা। একই অভিযোগ মাদ্রিদে পৌঁছানো স্প্যানিশ আর ডাচ অধিকারকর্মীদেরও।
গাজামুখী নৌবহর থেকে গ্রেপ্তার স্প্যানিশ অধিকারকর্মী রাফায়েল বোরেগো বলেন, ‘আমাদের মাথায় অস্ত্র তাক করছিল, পুলিশের কুকুর হামলে পড়তে প্রস্তুত ছিল, মেঝেতে টেনেহিঁচড়ে নেয়া হচ্ছিল। আইনজীবী, এমনকি পরিবারের সদস্যদের সাথেও আমাদের কথা বলতে দেয়া হয়নি। দূতাবাসের সহযোগিতা নিতে দেয়া হচ্ছিল না।’
গাজামুখী নৌবহর থেকে গ্রেপ্তার স্প্যানিশ অধিকারকর্মী হুয়ান বোরডেরা বলেন, ‘আমাদের ময়লা পানি আর পঁচা খাবার খেতে দেয়া হয়েছিল। যারা অনশনে ছিল, তাদের মারছিল।’
আরও পড়ুন:
গাজামুখী নৌবহর থেকে গ্রেপ্তার স্প্যানিশ সংবাদকর্মী নেস্টর প্রিয়েতো বলেন, ‘আমাদের ৭৫ বছর বয়সী এক সহকর্মীকে তিনদিন ধরে ইনসুলিন নিতে দেয়া হয়নি। ইসরাইলি কর্মকর্তারা বলছি, পশুদের জন্য কারাগারে তারা কোনো ওষুধ রাখে না। আরেক মেক্সিকান সহকর্মী হৃদরোগের জন্য জরুরি ওষুধ চাইলে তাকে বলা হয়, হৃৎপিণ্ড থেমে না গেলে ওষুধ দেবে না।’
গাজামুখী নৌবহর থেকে গ্রেপ্তার ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত ডাচ অধিকারকর্মী মার্কো টেশ বলেন, ‘কারাগারে বন্দিদের তারা কোনো চিকিৎসা সহায়তা দিচ্ছে না। আন্তর্জাতিক জলসীমা থেকে গ্রেপ্তার, বিশেষ করে আরব বা মুসলিম বংশোদ্ভূত হলে তাদের সাথে আরও জঘন্য দুর্ব্যবহার করা হচ্ছে।’
এদিকে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার যাত্রা ভেস্তে গেলেও গাজা অভিমুখে ১০টি ছোট নৌকার সাথে যাত্রা অব্যাহত আছে কনসায়েন্স নৌযানের। গাজায় ইসরাইলি অবরোধকে চ্যালেঞ্জ জানাতে ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের অংশ হিসেবে গেলো মঙ্গলবার ইতালির ওতরান্তো বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে কনসায়েন্স।
প্রায় ১৮ বছর ধরে ২৩ লাখ মানুষের বসতি গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের মানবিক সংকট বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে, ২০১০ সাল থেকে বারবার ইসরাইলি অবরোধ ভাঙার চেষ্টা করেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক নাগরিক সংগঠনের জোট ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন।





