পূর্বাচলের ৩০০ ফিট সড়ক যেন মরণফাঁদ!

৩০০ ফিট সড়কে দুর্ঘটনা
৩০০ ফিট সড়কে দুর্ঘটনা | ছবি: এখন টিভি
0

রূপগঞ্জের পূর্বাচল উপশহরের দৃষ্টিনন্দন ৩০০ ফিট সড়কে দিন দিন বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। এতে স্থানীয়দের মধ্যে বাড়ছে আতঙ্ক ও উদ্বেগ। স্থানীয়রা জানান, এ সড়কে দিনের তুলনায় রাতে দুর্ঘটনার হার বেশি। রাত গভীর হলেই ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেলের বেপরোয়া গতির প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এ অনিয়ন্ত্রিত রেসিংয়ের কারণেই প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা, ঝরছে প্রাণ।

১৪ লেনের এক্সপ্রেসওয়েতে ছুটছে অসংখ্য যানবাহন। এরইমধ্যে একটা উল্লেখ্যযোগ্য সংখ্যায় গাড়ির চালক তরুণ তরুণী। মনে হয় এই বুঝি অদক্ষ চালকের হাতে সড়কে প্রাণ যাবে আবার কারও।

রাত যখন ১০টা পার হয়ে যায়, তখন রাজধানীর অদূরে ৩০০ ফিট হয়ে উঠে এক ভয়ংকর মরণঘাতী সড়কে। এ সড়কের ছয়টি আন্ডারপাস, মাঝে আট লেনের মূল সড়ক, দুই ধারে আরও ছয় লেনের সার্ভিস রোড। সবগুলো লেনে দাপিয়ে বেড়ায় অসংখ্য তরুণ তরুণীর দ্রুত গতির গাড়ি। রাজউকের এ সাড়ে ১২ কিলোমিটার সড়কটি ৭ থেকে ৯ মিনিটে পাড়ি দেয় তারা। আশপাশের কিশোররা মাতাল অবস্থায় প্রতিযোগিতা করে, গাড়ি চালায় বেপরোয়া গতিতে। এতেই ঘটে বিপত্তি।

স্থানীয়রা জানান, যানবাহনের সাউন্ডে তাদের রাতে সমস্যার হয়। প্রায়ই এখানে দুর্ঘটনা ঘটে। প্রশাসন এ বিষয়ে কোনো কার্যকর পদক্ষেপও গ্রহণ করে না।

মাত্র তিনদিন আগের কথা, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক তরুণের অতিরিক্ত গতির গাড়ি পিচঢালা রাস্তার ঘষায় পুড়ে ছাই হয়ে যায়। প্রাণ হারায় তরুণ সেই চালক। আর বেঁচে ফেরা যাত্রী কাতরাচ্ছেন হাসপাতালে। এভাবেই এ সড়কে গতির নেশায় বুঁদ তরুণ তরুণীরা মানছেন না সড়ক আইন।

আরও পড়ুন:

চলতি বছরের আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বেপরোয়া গতিতে গাড়ী চালিয়ে মৃত্যু ঘটানোর অপরাধে ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী রূপগঞ্জ থানায় মামলা হয়েছে ২৬টিরও বেশি। কাঞ্চন হাইওয়ে পুলিশ ক্যাম্পের রেজিস্টার ঘেটে দেখা যায়, ৩১ জুলাই পর্যন্ত সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ সংক্রান্তই ট্রাফিক মামলা রুজু হয়েছে ১৩৯টি। আগস্টের শেষ সময়ে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৬৩টিতে। সেপ্টেম্বর মাসে তা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।

রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘৩০০ ফিট এক্সপ্রেসওয়ের মধ্যে দুটি চেকপোষ্ট চলমান আছে।’

যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলছে, দেশে ত্রুটিপূর্ণ সড়ক ব্যবস্থাপনা ও মানুষের সচেতনতার অভাবেই দুর্ঘটনা সমানতালে বাড়ছে। উচ্চ গতির রাস্তায় যেভাবে লেন ডিসিপ্লিন করার কথা তা সরকার করতে পারছে না, বলছেন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘তারা কারিগরি কৌশল ব্যবহার করছেন। আমরা আমলাতান্ত্রিক কৌশল ব্যবহার করছি। এ জায়গাতেই একটি বড় ধরনের গলদ তৈরি হয়েছে।’

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ড. শামসুল হক বলেন, ‘ড্রাইভারকে অবৈধ লাইসেন্স দেয়া হয়। এ অবস্থায় আপনি কীভাবে প্রত্যাশা করেন বিষয়টি সুশৃঙ্খল হবে। বাগানে ফুল না ফুটলে মালির দোষ। আমাদের এখানেও ওপরে হলো রুট কারণ এবং নিচে যা দেখেন এগুলো সিম্পটমস। অন্যান্য দেশে ফাংশন করে যার কারণে সুশৃঙ্খল থাকে।’

এক্সপ্রেসওয়ে গুলো ব্যবহার করার বিধি সম্মত আইনের বিষয়ে খোদ সরকারের অজ্ঞতা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

এফএস