নামছে বিমান। মনে হচ্ছে- এই বুঝি কোনো ভবন ভেদ করে ধ্বসে পড়বে। এ যেনো দুর্ঘটনাকে নিজ থেকে আমন্ত্রণ জানানোর মহা আয়োজন। দৃশ্যটি ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা উত্তরা প্রিয়াংকা রানওয়ে সোসাইটির। অনেকটা মনে করিয়ে দিচ্ছে মাইলস্টোন স্কুলের সেই যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনা।
গত ২২ জুলাই উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ৩৬ জনের মৃত্যুর পর নতুন করে আলোচনায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ চলাচলের নিরাপত্তা। এরপর অবস্ট্যাকল লিমিটেশন সারফেস শনাক্তে নতুন করে শুরু হয় জরিপ।
বিমানবন্দরের রানওয়ে ঘেঁষে গড়ে উঠেছে উত্তরার প্রিয়াংকা রানওয়ে সোসাইটির সারি সারি বহুতল ভবন। কোনটি ছয় তলা, কোনটি আট। অথচ বিমান চলাচলের নিরাপত্তার জন্য এ ট্রানজেশনাল সারফেস বা হলুদ সীমারেখায় এমন উঁচু ভবন ঝুঁকিপূর্ণ বলে সতর্ক করেছিল সিভিল অ্যাভিয়েশন।
প্রিয়াংকা রানওয়ে সোসাইটির ৩০ নম্বর প্লটে মায়াকাব্য নামের ভবনটি পড়েছে হলুদ সীমারেখায়। এটি নোটিশ পাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর একটি। পাশের ভবন ভার্টিকাল-২ এর ফ্ল্যাট মালিকরাও পেয়েছেন নোটিশ।
এসব ভবনে যারা বাস করেন তাদের অধিকাংশ অভিনেতা, অভিনেত্রী এবং ব্যবসায়ী। এ বছরের মে মাসে রাজউকের মাধ্যমে এমন ছয়টি ভবনের বর্ধিত অংশ ভাঙার নোটিশ দিয়েছিল সিভিল অ্যাভিয়েশন। এসব ভবনে মোট ফ্ল্যাটের সংখ্যা ১০৬। ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় রয়েছে সোসাইটির আরও ৮৭টি ভবনের নাম।
মায়াকাব্যের ৮ তলায় ফ্ল্যাট কিনেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন। সব নথিপত্র দেখেই ফ্ল্যাট কিনেছেন বলে দাবি তার। তবে সিভিল এভিয়েশন বলছে, ভবনটির অনুমোদন ছিল ৭ তলা, করা হয়েছে ৮ তলা।
অভিযোগ যাচাইয়ে মায়াকাব্যের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ল্যান্ডপ্যাক লিমিটেডের অফিসে গেলে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি কেউ। ফোন করেও পাওয়া যায়নি কাউকে। ব্লক করে দেয়া হয় প্রতিবেদকের নাম্বার।
রাজউক চেয়ারম্যান বলছেন, ভবন নির্মাণে গাফিলতি ছিল তিন পক্ষেরই। ভবন নির্মাতা, সিভিল অ্যাভিয়েশন, রাজাউক- কারোরই দায় এড়ানোর সুযোগ নেই।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে গত ২০ জুলাই ক্যাটাগরি-২ এ উন্নীত করা হয়েছে। আগে উড়োজাহাজ অবতরণের সময় বৈমানিকদের অন্তত ২৩২ ফুট দূর থেকে রানওয়ে দেখতে হতো, সেখানে নতুন নিয়মে তা এখন ১৩২ ফুট। আর এ পরিবর্তনেই আরও কঠোর হয়েছে উচ্চতা নীতিমালা।





