আপিল কোর্টের রায়েও দমেননি ট্রাম্প, অধিকাংশ দেশের পণ্যে শুল্ক বহাল

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প | ছবি: সংগৃহীত
0

আপিল কোর্টের রায়ে ধাক্কা খেলেও অধিকাংশ দেশের পণ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপিত শুল্কনীতি বহাল থাকবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে নির্বাহী ক্ষমতাবলে ট্রাম্প সম্পূরক শুল্ক আরোপ করলেও প্রচলিত আইনের অন্তত ২টি ধারা মার্কিন প্রেসিডেন্টের এ স্বেচ্ছাচারিতাকে সমর্থন করে। পাশাপাশি সর্বোচ্চ আদালতের রায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে গেলেও অপরিবর্তিত থাকবে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম ও অটোমোবাইল খাতে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশে আরোপিত শুল্ক।

অধিকাংশ দেশের পণ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আরোপিত শুল্ককে অবৈধ ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি ফেডারেল আপিল কোর্ট। ১২৭ পৃষ্ঠার রায়ে বলা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা আইন অনুযায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্টের একটি দেশের ওপর সম্পূরক শুল্কারোপের ক্ষমতা নেই।

যদিও আদালতের এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে আগামী ১৪ অক্টোবর। আর নির্দিষ্ট এ সময়ের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টে আবেদনের সুযোগ পাবে বর্তমান প্রশাসন। এখন প্রশ্ন উঠছে, যদি আপিল কোর্টের রায় বহাল থাকে তাহলে কি বাতিল হয়ে যাবে ট্রাম্পের নয়া শুল্কনীতি।

ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে সরকারি ব্যয় কমানো ও ফেডারেল সরকারের অর্থনৈতিক ঘাটতি পূরণে একাধিক পদক্ষেপ নেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কংগ্রেসকে বাদ দিয়েই জাতীয়ভাবে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে সীমাহীন ক্ষমতা বলে বিদেশি পণ্যে জুড়ে দেন সম্পূরক শুল্ক।

মার্কিন অর্থনীতির ভঙ্গুর দশার দোহাই দিয়ে জারি করা এ ন্যাশনাল ইমার্জেন্সির বিরুদ্ধে গেলো মে মাসে রায় দেয় নিউইয়র্কের একটি ট্রেড আদালত।

রায়ে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে এমন কোনো অর্থনৈতিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়নি যার কারণে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে প্রেসিডেন্টকে সর্বোচ্চ ক্ষমতা দিতে হবে। শুক্রবার (২৯ আগস্ট) ফেডারেল আপিল কোর্টও এই রায়ের পুনরাবৃত্তি করেছে। কোনো কোনো বিশ্লেষকের দাবি, আদালতের এই রায় সামঞ্জস্যপূর্ণ।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক জিন শিহান জেনো বলেন, ‘আইনের বিধান মানলে আদালত কখনোই ট্রাম্পের ব্যাখ্যা মেনে নেবেন না। যেমন ফেডারেল সরকারের বাণিজ্য ঘাটতি পূরণে জরুরি অবস্থা জারি করা প্রয়োজন। কারণ এই ঘাটতি দশকের পর দশক ধরে চলছে। একে জরুরি অবস্থা বলা যায় না। তবে বর্তমান প্রশাসনের জন্যে এটা সবসময়েই চ্যালেঞ্জের। কাজেই তারা উচ্চ আদালতে আবেদন করবেন এটাই স্বাভাবিক।’

আরও পড়ুন:

ট্রাম্প প্রশাসন যদিও বলছে, ১৯৭৭ সালের জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা আইন মেনে কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াই শুল্কারোপের বিরল ক্ষমতা অর্জন করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী একটি দেশের ওপর সম্পূরক শুল্ক নির্ধারণের ক্ষমতা আছে কংগ্রেসের। যদিও আইনপ্রণেতারাই ধীরে ধীরে এই ক্ষমতা ব্যবহারের সুযোগ করে দিয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে, যার সর্বোচ্চ সুযোগ নিয়েছেন ট্রাম্প।

তবে ট্রাম্পের নয়া শুল্কনীতির বেশ কিছু বিষয় আপিল কোর্টের এ রায়ের আওতায় থাকছে না। যেমন বিদেশ থেকে আমদানি করা স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম ও অটোমোবাইল খাতে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশে আরোপিত শুল্ক অপরিবর্তিত থাকবে। এমনকি প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প চীনের ওপর যে শুল্ক আরোপ করেছিলেন তাতে বাধা দিতে পারবে না আপিল আদালতের রায়।

কয়েকজন বিচারক দাবি করছেন, ১৯৭৭ সালের আইনের ভিত্তিতে ক্ষেত্র বিশেষে শুল্কারোপের ক্ষমতা আছে মার্কিন প্রেসিডেন্টের। যা সমর্থন করছেন রিপাবলিকান পরামর্শদাতারা।

রিপাবকলিকান পার্টির পরামর্শদাতা রিক ডেভিস বলেন, ‘কিন্তু শুল্ক আদায়ের অন্য প্রক্রিয়া আছে। যেগুলোর মাধ্যমে ট্রাম্প আংশিকভাবে শুল্ক আদায় করতে পারবেন। তবে শুল্কনীতির আওতায় থাকা সব দেশের কাছ থেকে শুল্ক আদায় করা যাবে না। ৩০১ ধারা অনুযায়ী নির্বাহী ক্ষমতা বলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট চাইলে কিছু দেশের ওপর নিজেই শুল্কহার ধার্য কর‌তে পারেন।’

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে আরও দাবি করা হচ্ছে। আইনের ৩০১ ধারা ছাড়াও বাণিজ্য সম্প্রসারণ আইনের ২৩২ ধারা অনুযায়ীও বর্তমান ট্রাম্প প্রশাসন নির্দিষ্ট পণ্যের ওপর শুল্কারোপের ক্ষমতা রাখে। তবে এর জন্যে প্রয়োজন বাণিজ্য বিভাগের স্বাধীন তদন্ত প্রতিবেদন। শুধু প্রেসিডেন্টের মতের ভিত্তিকে শুল্কারোপ করা যায় না।

এসএইচ