ছন্নছাড়া বিপিএলের ১১তম আসরে কয়েকটি ফ্র্যাঞ্চাইজির অর্থ কেলেঙ্কারি দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের গায়ে এঁকেছে কলঙ্কের দাগ। তবে সবকিছু অতিক্রম করে দুর্বার রাজশাহী যেন ছাড়িয়ে গেছে কেলেঙ্কারির সকল সীমা। টুর্নামেন্ট শেষ হওয়ার দুই মাস পেরোলেও এখনও চাতক পাখির মতো নিজের পাওনা টাকার আশায় দিন গুণছেন দলটির টিম বয় থেকে শুরু করে ম্যানেজমেন্টে কাজ করা অধিকাংশ মানুষ।
টুর্নামেন্টের মাঝপথেই প্লেয়ার পেমেন্ট নিয়ে সামনে এসেছিল রাজশাহীর মালিক শফিক আহমেদের নানা অনিয়ম। বারবার তাগাদা দিলেও পারিশ্রমিক বুঝিয়ে দিতে ব্যর্থ হন তিনি। শেষ পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারের হস্তক্ষেপে একপ্রকার চাপের মুখেই টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন ভ্যালেন্টাইন গ্রুপের কর্ণধার। তাতেও ব্যর্থ হয়ে ১০ মার্চের মধ্যে সব পাওনা বুঝিয়ে দিতে ক্রীড়া উপদেষ্টা বরাবর নতুন করে আবেদন পাঠান শফিক আহমেদ।
সেই প্রতিশ্রুতিও রাখতে পারেননি তিনি। বিদেশি ক্রিকেটার থেকে স্বল্পআয়ের পাঁচ টিমবয়, দুর্বার রাজশাহীর সঙ্গে কাজ করাটাই যেন তাদের জীবনের সবচেয়ে বড় অপরাধ।
দুর্বার রাজশাহীর টিমবয়দের মধ্যে একজন বলেন, 'বিসিবি তো আমাদের কোনো টাকা দিবে না। খেলোয়াড়দের টাকাটা বোর্ড দেখবে, কিন্তু আমাদের ম্যানেজমেন্টের টাকা তো বোর্ড দেখবে না। কারণ আমাদের কোনো চুক্তিপত্র থাকে না। খেলোয়াড়রা অনেক টাকা ইনকাম করে, কোটটি কোটি টাকা ইনকাম করে, ওদের কিছু টাকা গেল সমস্যা নেই।'
টুর্নামেন্টের আগে একেকজন টিমবয়ের সাথে দেড় থেকে দুই লাখ টাকার চুক্তি করে দুর্বার রাজশাহী। অনেক জোরাজুরির পরও এখন পর্যন্ত হাতে পেয়েছেন নামেমাত্র ৫০ হাজার টাকা। এমনকি ঈদ পালন করতে চাঁদ রাত পর্যন্ত ফ্র্যাঞ্চাইজিটির দুয়ারে দুয়ারে কড়া নেড়েছেন তারা।
টিমবয়দের মধ্যে অন্য একজন বলেন, 'ঈদের রাতে কিছু টাকা দিয়ে যদি বলতো তোমরা এটা দিয়ে ঈদ করো, বাকিটা পড়ে দেখছি। তাও মনে হয় সব ছেলেগুলোর মন একটু শান্তিতে থাকতো। চাঁদ রাতেও এসএমএস করেছে যে, ভাই দেখেন না, ঈদের জন্য যদি কিছু হেল্প করা যায় তাহলে আমাদের অনেক ভালো হয়। কিন্তু তাদের কোনো রেসপন্সই আসেনি।'
পাওনা বুঝে পেতে টিম বয়রা ধর্ণা দিচ্ছেন ফ্রাঞ্চাইজিটির অপারেশনস ম্যানেজার জায়েদ আহমেদের কাছে। তবে এই কর্মকর্তা নিজেই নাকি এখনও পাননি কোনো কানাকড়ি। সরকারকে দেয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের পর গা ঢাকা দেয়া শফিককে দিনরাত খোঁজ করেছেন জায়েদ। অবশেষে তাকে খুঁজে পেলেও, মিললো পুরোনো আশ্বাস।
জায়েদ আহমেদ বলেন, 'আমি এক টাকাও পাইনি। কেউ প্রমাণ করে দেখাক যে আমি এক টাকা পেয়েছি। বিদেশি খেলোয়াড়রা আমি থাকা অবস্থায় ২৫ পার্সেন্ট পেয়েছে। এরপর পুরোটাই শফিক সাহেবের জন্য। আমি যখনই বলি, উনি বলে বিদেশি খেলোয়াড় নিয়ে তোমার কথা বলার দরকার নাই, এগুলো আমি দেখছি। নীতিবোধের জায়গা থেকে দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে আমি এখন উনার পিছে পিছে ঘুরি। সবাই সবার বাসায় গিয়ে ঘুমায়, আমি রাতে ৯টা, ১০টা পর্যন্ত উনাকে খুঁজে বেরিয়েছি মাঝখানে। পরে যখন যোগাযোগ শুরু হইছে তখন বলছে আমি লজ্জায় তোমার সাথে যোগাযোগ করিনি।'
শুধু টিমবয় নয়, বিপিএলে রাজশাহীর হয়ে খেলতে আসা কোনো বিদেশি ক্রিকেটারই এখন পর্যন্ত বুঝে পায়নি নিজেদের চুক্তির ৪০ শতাংশ অর্থ। গুঞ্জন আছে জিম্বাবুয়েতে অনুষ্ঠিত আইসিসির বোর্ড সভায় বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদকে প্রশ্ন করা হয়েছে বিদেশি ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক নিয়েও। এবারের বিপিএল সত্যি যে বিশ্বজুড়ে তৈরি করেছে নতুন কলঙ্ক। এখন পরের মৌসুমে বিপিএল খেলতে বিদেশি ক্রিকেটাররা আসেন কি না, এটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।