কিশোরগঞ্জের হাওরে প্রাণবন্ত গো-চারণভূমি, বদলে যাচ্ছে অর্থনীতি

কিশোরগঞ্জের হাওরে প্রাণবন্ত গো-চারণভূমি, বদলে যাচ্ছে অর্থনীতি | এখন টিভি
0

কিশোরগঞ্জে অলওয়েদার সড়কের দুই পাশে দিগন্তজোড়া সবুজের সমারোহ। বিস্তীর্ণ হাওরাঞ্চল শত শত গরুর অবাধ বিচরণে পরিণত হয়েছে প্রাণবন্ত গো-চারণভূমিতে। বছরের এই সময়ে বোরো ধান আবাদ ও মাছ শিকারের পাশাপাশি হাওরের কৃষকরা ব্যস্ত থাকেন ছয় মাস মেয়াদি পশু পালনে। প্রাকৃতিক ঘাসে গবাদিপশু লালন-পালনে খরচ কমায় বদলে যাচ্ছে প্রান্তিক অর্থনীতির চিত্র।

কিশোরগঞ্জের বিস্তীর্ণ হাওরজুড়ে গরু-মহিষের বিচরণ। ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলার প্রান্তিক কৃষকরা সাধারণত গবাদিপশু লালন-পালন করেন। কেউ চার থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরের গ্রাম থেকে পশু হাওরে আনেন। কেউবা অস্থায়ী তাঁবু বানিয়ে সেখানেই রাখেন পশুগুলো।

'বাথান' নামে পরিচিত গবাদিপশু পালনের এই পদ্ধতি দীর্ঘদিনের। শুষ্ক মৌসুমে পানি কমে গেলে হাওরের বুকে বিভিন্ন জাতের ঘাস বেড়ে ওঠে। যা কাজে লাগিয়ে স্থানীয় কৃষকরা ছয় মাস মেয়াদি গরু লালন-পালন করেন। প্রাকৃতিক ঘাসের সহজলভ্যতায় খরচ কম আর পশুগুলোর স্বাস্থ্যও ভালো থাকে। ফলে অল্প বিনিয়োগে লাভবান হন কৃষকরা।

কৃষকদের মধ্যে একজন বলেন, '৮৩টা গরু আমার এই খামারে আছে। আমরা ঘাস কাওয়াই, ঘাসের উপরই সব নির্ভর আমাদের।'

বর্ষা মৌসুমে হাওরে গবাদিপশু পালন কিছুটা কমে যায়। এ সময় প্রায় ১০ হাজার টন দুধ আর চার হাজার ৭০০ টন মাংস উৎপাদিত হয়। তবে জানুয়ারী থেকে মে মাস শুষ্ক মৌসুমের এই সময়ে দুধের উৎপাদন বেড়ে দাঁড়ায় ১৪ হাজার টন আর মাংসের উৎপাদন দাঁড়ায় ছয় হাজার মেট্রিক টন। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বলছে, নিরাপদ উপায়ে দুধ ও মাংস উৎপাদনে কৃষকদের পরামর্শ ও সহায়তা দেয়া হচ্ছে।

কিশোরগঞ্জের জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সুভাষ চন্দ্র পণ্ডিত বলেন, 'এখানে এখন প্রচুর প্রাকৃতিক ঘাস পাওয়া যায়। এই ঘাসগুলো খেয়েই গরুগুলোর স্বাস্থ্য এবং দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা প্রণিসম্পদ বিভাগ থেকে সবসময় তাদের সাথে আছি।'

কিশোরগঞ্জে উৎপাদিত দুধ ও মাংসের ১৫ শতাংশই আসে হাওর অঞ্চল থেকে। এই অঞ্চলের প্রাণিসম্পদ নির্ভর অর্থনীতি দিন দিন আরও বিকশিত হচ্ছে, যা একদিকে স্থানীয় কৃষকের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটাচ্ছে, অন্যদিকে দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় রাখছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান।

এসএস