চীন যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত না, মার্কিন থিংক ট্যাংক কিছুদিন আগেই এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। যেখানে বলা হয়, ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি সামরিক খাত আধুনিকায়নে মরিয়া, কারণ এশিয়ায় নিজেদের প্রভাব বজায় রাখতে হবে। মার্কিন সামরিক বিশ্লেষণ বলছে, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে এশিয়ার শক্তিশালী সামরিক শক্তিগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে বেইজিং। এমনকি বিশ্বের সবচেয়ে সামরিক শক্তিধর যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত কোন কোন ক্ষেত্রে চীনের তুলনায় পিছিয়ে পড়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে পিপলস লিবারেশন আর্মি নিয়ে ওয়াশিংটনভিত্তিক গ্রুপ র্যান্ড কর্পের গবেষণা দিচ্ছে কিছু ভয়ংকর তথ্য। বলা হচ্ছে, সামরিক খাতে কমিউনিস্ট পার্টির কর্তৃত্বের কারণে যুদ্ধ শুরু হলেও সেখানে বিপাকে পড়বে পিএলএ। কারণ দেশটির সামরিক বাহিনী কমিউনিস্ট পার্টির নির্দেশনাতেই সামরিক খাত আধুনিক করছে, এখানে যুদ্ধের কোনো প্রস্তুতি নেই। গবেষণায় দেখা গেছে, পিপলস লিবারেশন আর্মি প্রশিক্ষণের ৪০ শতাংশ সময় ব্যয় করছেন রাজনৈতিক আলাপচারিতায়।
এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে দেশটির সামরিক বাহিনী। আধুনিক সময়ের যুদ্ধের জন্য ঠিক কতটা প্রস্তুত পিএলএ, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে নানা মহলে। সেনাদের ইউনিট এখানে কমান্ডিং অফিসারের পাশাপাশি রাজনৈতিক প্রতিনিধিদের দিয়ে পরিচালিত হয়। যুদ্ধক্ষেত্রে তাদের পারফরমেন্স তাই তেমন গুরুত্ব বহন করে না। ব্যতিক্রমী নির্দেশনার কারণে জরুরি অবস্থায় ব্যবস্থা নেয়ার তাৎক্ষণিক সক্ষমতা থাকে না সেনাদের।
সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অদূর ভবিষ্যতে চীন–যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যুদ্ধের আশঙ্কা আছে। যেখানে মিসাইল আর বোমার কথা না ভেবে পেন্টাগনকে ভাবতে হবে অন্য হুমকি নিয়ে। তারা বলছেন, যুদ্ধ হলে হতে পারে তাইওয়ান ইস্যু নিয়ে। এই স্বায়ত্বশাসিত দ্বীপাঞ্চল অধিগ্রহণ বেইজিংয়ের অন্যতম বড় লক্ষ্য। যেখানে সামরিক শক্তি প্রয়োগের তুলনায় সহজ আর কম ঝুঁকিপূর্ণ পথ বেছে নেবে চীন। মূলত যুদ্ধ চীনের প্ল্যান এ নয়, প্ল্যান বি।
গেল কয়েক বছরে নৌবাহিনীতে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছেছে বেইজিং। এখন নিজেদের জলসীমা পেরিয়ে এর বাইরেও উপস্থিতি রয়েছে চীনের রণতরীর। পূর্ব আফ্রিকায় স্থাপন করা হয়েছে বহির্বিশ্বে প্রথম সামরিক ঘাঁটি। একইসময় স্টেলথ যুদ্ধবিমান আর হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে বেইজিং। মরুভূমিতে প্রস্তুত রেখেছে একসঙ্গে ১২০ টি মিসাইলের সাইলো, যেখান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়লে গিয়ে পড়বে যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে। এই সমরাস্ত্রগুলোর যুদ্ধক্ষেত্রে কার্যকারিতা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদনে বলা হয়, যুদ্ধক্ষেত্রে অত্যাধুনিক সামরিক প্রস্তুতি অনেক সময় ব্যর্থতার প্রমাণ দেয়। পিএলএর মধ্যে সেই দুর্বলতা রয়েছে। যদিও পেন্টাগন বলছে, চীন সংখ্যায় নিজেদের সামরিক সক্ষমতা বাড়িয়ে যাচ্ছে। শত বছরে অনেক বেশি পরমাণু অস্ত্র তৈরি করেছে বেইজিং। মার্কিন গোয়েন্দারা বলছেন, ২০২৭ সাল নাগাদ তাইওয়ানে অভিযান চালাতে পারএ পিএলএ। সেক্ষেত্রে তাইওয়ানের ওপর প্রয়োগ করা হতে পারে রাজনৈতিক চাপ। পাঠিয়ে দেয়া হতে পারে যুদ্ধবিমান আর রণতরী।
প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক র্যাডম মাইক বলেন, ‘চীন আগ্রাসন শুরু করতে পারে। পরমাণু যুদ্ধ কিংবা সামরিক যুদ্ধ, যেকোনো যুদ্ধের জন্যই তারা পিএলএ'কে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কিন্তু নেতাদের ঝুঁকিতে ফেলে কিছুই করবে না বেইজিং। ভবিষ্যতে যুদ্ধ নিয়ে কোনো ঝুঁকি নেবে না চীন। পরমাণু সক্ষমতা চীন বাড়াচ্ছে, যেন যুক্তরাষ্ট্রকে টেক্কা দেয়া যায়। তাইওয়ান আর দক্ষিণ চীন সাগরে প্রভাব বাড়াতে চায় বেইজিং। তাহলে বিশ্ব পরিমণ্ডলে প্রভাব বাড়বে।’
কিন্তু যুদ্ধের পরিকল্পনা না থাকলে কেন সামরিক সক্ষমতা বাড়াতে এত বিনিয়োগ করছে বেইজিং? বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পরিকল্পনা তাইওয়ানকে দখলের নয়, কমিউনিস্ট পার্টিকে বহাল তবিয়তে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে শক্তিশালী করা হচ্ছে পিপলস লিবারেশন আর্মিকে। নতুন যুদ্ধবিমান আর রণতরী দেখিয়ে দেশের মানুষকেও নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হচ্ছে। পিপলস লিবারেশন আর্মি বাঘ হয়ে রয়ে গেছে শুধু কাগজে কলমে।





