এখন জনপদে
পরিবেশ ও জলবায়ু
0

জলবায়ু পরিবর্তনে ম্লান হয়েছে মাঘের চিরচেনা সৌন্দর্য

প্রকৃতির বিশ্রাম আর বসন্তের আগমনী বার্তা নিয়ে আসে মাঘ মাস। কুয়াশা, শিশির, এবং কৃষকের সোনালি রোদে মাঠে নামার দৃশ্য এ মাসে সজীবতা ছড়ায়। খেজুরের রস সংগ্রহ ও পিঠা-পায়েসের ঐতিহ্য মাঘের চিরচেনা অনুষঙ্গ হলেও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এর রূপ ক্রমশ ম্লান হয়ে আসছে। শহরে দূষণ আর নাগরিক ব্যস্ততায় মাঘের নৈসর্গিক সৌন্দর্য হারাচ্ছে প্রতিদিন। দূষণের ছোবল থেকে ঋতুকে বাঁচাতে পরিবেশের প্রতি ভালোবাসা এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

কুয়াশার চাদর মেখে আছে প্রকৃতি। এ যেন প্রশান্তির সময়। প্রকৃতির বিশ্রাম। শীতের শেষ স্পর্শ, অন্যদিকে বসন্তের আগমনী বার্তা নিয়ে আসে মাঘ। কুয়াশার স্নিগ্ধ আলিঙ্গন, শিশিরের ছোঁয়া, এবং দিগন্ত জোড়া মাঠের সজীব প্রকৃতির অপূর্ব সৌন্দর্য ভর করে এ মাসেই। সোনালি রোদে কৃষকেরা মাঠে নামে, মিষ্টি উষ্ণতায় গতি পায় কাজ। শহরের বুক জুড়ে মাঘ তার কথা না রাখলেও, কথা রেখেছে কৃষ্ণকলি, বোতাম, জিনিয়া, কসমস ও গাঁদা। অন্যদিকে গাছিদের বাড়ির উঠানে চলে খেজুরের রস জ্বাল দেওয়ার কাজ। এ মাসে তীব্র শীতে প্রভাব যেমনি কমেছে তেমনি কমেছে খেজুর গাছ আর রসের আহরণ।

‘মাঘের শীতে বাঘ পালায়’ এই প্রবাদ এ মাসের শৈত্যপ্রবাহের সম্পর্কে জানান দিলেও, জলবায়ু পরিবর্তনে মাঘ মাস এখন আর আগের মতো স্বচ্ছ রূপে ধরা দেয় না এ যেন তার প্রমাণ। এখনকার মাঘ হারিয়ে যায় দূষণে । কুয়াশা না ধূলির স্তর , এই তর্কেই ফুরোয় মাঘ। বাঙালির নানা উৎসব দূষণে এবং নাগরিক জটে উদযাপনের রং হারাচ্ছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন যুগ্ম সম্পাদক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি শীত যেন একটা উঁকি দিয়ে চলে যাচ্ছে।

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলাফলগুলো আমরা এখন দেখতে পারছি, দূষণের কারণে ফুলের রেণু উপর ধুলো পড়ে থাকে। যার ফলে কীট-পতঙ্গ পরাগায়ন করতে যায় না। এছাড়া পাখিরাও মধু আহরণে আসে না। এজন্য গ্রামে শীতের সৌন্দর্য কিছুটা দেখা গেলেও শহরে তা একদম নেই।’

ঋতু রূপের মাঘ এখন কেবলই স্মৃতি। খেজুরের রসের পিঠা, দুধের পুলি এসব ছিল অনেকের শৈশবের শীতের অনুষঙ্গ।

অভিনয় শিল্পী ডা. এজাজুল ইসলাম বলেন, ‘মানুষ এখন বড় মিথ্যাবাদী হয়ে গেছে। সত্য কথা কেউ বলে না। ঋতুও একইভাবে মিথ্যাবাদী হয়ে গেছে। এজন্য শীতকালে শীত আসে না। হঠাৎ শীত আসলেও হঠাৎ করে তা চলে যায়। দাদা-নানা বাড়িতে শীতকালের পিঠার কথা আমার এখনো মনে পড়ে। একবার সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আসেন হুমায়ূন আহমেদ স্যারের অনুরোধে। আমরা তখন গ্রামে এক লাইনে বসে বহু পদের পিঠা বানানো দেখেছি। আমার এখনো মনে আছে সুনীল দা অনেকক্ষণ সব অবাক হয়ে দেখছিলেন।’

মাঘের ঋতু বৈচিত্র্য এখনো খানিকটা দেখা মিলে গ্রামীণ নগর জীবনে। এখানে গল্প জমে উষ্ণ চায়ের আড্ডায় বিকেল হতেই শিশুদের উচ্ছ্বাস বাড়ে। ঝাঁক বেঁধে উড়ে যায় অচেনা অতিথি। মাঘের শীতে পানিতে ঝাঁপ দিতেও ভয় নেই মাছরাঙার। এ যেন সেই জীবনানন্দ দাশকে মুগ্ধ করা বাংলার মাঘের শেষ বিকেল।

সন্ধ্যায় সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে যে দিগন্ত হয়ে উঠে নিস্তব্ধ। তবুও সেখানে দেখা নেই সেই চির চেনা কুয়াশা মাখা শীতের। এখন প্রকৃতি ও মানুষ কান পেতেছে বসন্তের পায়ের আওয়াজের।

এএম