তথ্য প্রযুক্তি খাতে এগিয়ে যাওয়ার জন্য যখন মুঠোফোন আর ইন্টারনেটের দাম কমিয়ে গ্রাহক বাড়ানো জরুরি, তখন নানা করের ফাঁদে বাড়ছে অতিপ্রয়োজনীয় এ সেবার দাম। এতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে এ খাতে।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন-বিটিআরসির তথ্যমতে, গত বছরের জুনেও দেশে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারি ছিল ১২ কোটি ৯১ লাখ। সবশেষ নভেম্বরে এসে যা দাঁড়িয়েছে ১১ কোটি ৯০ লাখে। অর্থাৎ ছয়মাসে মোবাইলে ইন্টারনেট গ্রাহক কমেছে প্রায় ১ কোটি।
তার মধ্যে আবারো বাড়লো মুঠোফোনে কথা আর ইন্টারনেটের দাম। অপারেটররা যখন গ্রাহক ধরে রাখার চ্যালেঞ্জে, তখন মোবাইল সেবায় সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৩ শতাংশ করেছে এনবিআর।
এতে সম্পূরক শুল্ক, ভ্যাট ও সারচার্জ মিলিয়ে মোট ৩৯ শতাংশ কর আরোপিত আছে। আরও ৩ শতাংশ বৃদ্ধি করা হলে তা ৪২ শতাংশে উন্নীত হবে।
সবমিলিয়ে ১০০ টাকায় সরকার পাবে ৫৬ টাকা ৩০ পয়সা, যা নিয়ে ক্ষুব্ধ গ্রাহক ও অপারেটররা।
রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার মোহাম্মদ সাহেদুল আলম বলেন, দিনকে দিন যখন গ্রাহক কমছে তখন এ সিদ্ধান্তে বিরূপ পড়বে সম্ভাবনাময় এ খাতে। বাজেটের এত আগেই এ সিদ্ধান্ত ব্যতিক্রম বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমাদের জন্য এইটা খুবই অবাক করা বিষয়। বিশেষ করে গত বছরে একটা বাজেটে ট্যাক্স বাড়ানো হয়েছে। তখন আমরা বলেছিলাম গ্রাহক লেভেলে ট্যাক্স বাড়লে সরকারের রাজস্ব কমে যাবে।’
বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তৈমুর রহমান বলেন, ‘মানুষ যখন বেশি ব্যবহার করবে তখন কানেক্টিভিটি বাড়বে সেক্ষেত্রে জিডিপিও বাড়বে। কিন্তু সরকার এখন দেখছে তাড়াতাড়ি কীভাবে ট্যাক্স নেয়া যায়। এক্ষেত্রে মানুষ খরচ কমানোর জন্য ইন্টারনেট ব্যবহার করা বন্ধ করে দিবে।’
শুধুই কি মোবাইল অপারেটর, প্রথমবারের মতো ব্রডব্যান্ড সেবায়ও ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এতে ৫শ' টাকার সংযোগে বাড়তি গুণতে হবে অন্তত ৭৭ টাকা। আর এক হাজার টাকার সংযোগে বাড়তি দিতে হবে ১৫৫ টাকা। আর এসবের চাপ শেষ পর্যন্ত গিয়ে পড়বে গ্রাহকের ঘাড়ে।
এরই মধ্যে আইএসপিএবি সভাপতি ইমদাদুল হক জানিয়েছেন, সরকার সিদ্ধান্তে অটল থাকলে আগামী মাস থেকেই নতুন বিল গ্রহণ করতে বাধ্য হবেন তারা।
ইন্টারনেট সার্ভিস প্রভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি ইমদাদুল হক বলেন, ‘১ হাজার টাকা প্যাকেজ সেটা হয়ে যাচ্ছে ১১৫৫ টাকা। এক্ষেত্রে ব্রডব্যান্ডও ভালোভাবে বাধাগ্রস্ত হবে।’
বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘গ্রাহক বৃদ্ধির দিকে নজর না দিয়ে শুধু হাজার কোটি টাকা ট্যাক্স আদায় বিফলে যেতে পারে সরকারের জন্য।’