আওয়ামী সরকারের ১৫ বছরে আর্থিক খাতে যে লুটপাট হয়েছে তার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়েছে দেশের পুঁজিবাজারেও। দুই স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ কোম্পানিই দুর্বল মৌলভিত্তির। আর কমদামি শেয়ারে কারসাজি ও প্রলোভন দেখিয়ে বিনিয়োগকারীদের লাখ লাখ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগও রয়েছে।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিএসইসি'র দায়িত্বে আসেন নতুন চেয়ারম্যান ও কমিশনাররা। শুরু হয় বিগত সময়ের কারসাজি ও তালিকাভুক্ত মন্দ কোম্পানির তদন্ত। পরে ব্যবস্থা নেয়া শুরু হলে বাজারে পতন ঘটায় কারসাজি চক্র। তাই তখনও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি বাজার। কারসাজিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে জোরালো হয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি।
বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে গেল দেড় দশকের অনিয়মের সমালোচনা করেন আলোচকরা। জানান, ১৫ বছরে যারা অনিয়মে জড়িত তারা এখনও বহাল তবিয়তে। তাদের বিষয়ে তদন্ত ও ব্যবস্থা নেয়া না হলে সংস্কার কাজে আসবে না।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, '১৫ বছরের আসলে একটা বিচার বিশ্লেষণ করা lরকার। আমরা প্রতিনিয়ত খারাপ আইপিও বা খারাপ কাজগুলোর কথা বলছি। কিন্তু তার একটা বিশ্লেষণমূলক বিচারব্যবস্থা কিন্তু এখন পর্যন্ত আসেনি। গত ১৫ বছরের রিপোর্ট দেন, এটা আমি নিশ্চিত করতে পারি, মরা চারজন যারা নির্বাচিত পরিচালক আছি, তাদের দিক থেকে কোনো ব্যত্যয় হবে না।'
এসময় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান জানান, দুর্বল কোম্পানির শেয়ারই পুঁজিবাজারে কারসাজির অন্যতম হাতিয়ার। এজন্য ইনসাইডার ট্রেডিং ও কারসাজি রোধে ডিএসই সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, 'আমরা বলি মার্কেটে এখন দুইটা প্রধান শব্দ হচ্ছে ইনসাইডার ট্রেডিং আর একটা হচ্ছে ম্যানুপুলেশন। সেই জায়গাগুলোতে আমরা কীভাবে ইফেক্টিভ মনিরটারিংকে আরও জোড়দার করতে পারি সেটা নিয়ে আমরা কাজ করছি।'
বর্তমানে একদমই প্রভাবমুক্ত পরিবেশে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কাজ করছে বলে জানান এই চেয়ারম্যান। তবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ, ব্রোকারেজ, মার্চেন্ট ব্যাংক ও সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানিসহ সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানে এখনো স্বচ্ছতার ঘাটতি রয়েছে বলে জানান তিনি।
মমিনুল ইসলাম বলেন, 'পুঁজিবাজারের প্রধান যে সমস্যাটা সেটা হচ্ছে আমাদের গভন্যান্সের স্ট্রাকচারটা। মার্কেট অপারেটর বা মার্কেট ইন্টারমিডিয়াম যারা আছেন তাদের মধ্যে ওই যে সক্ষমতা আমাদের মধ্যে যে দায়বদ্ধতা বা আমাদের মধ্যে যে স্বচ্ছতা সেটা এখনও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানেই নেই।'
এসময় তিনি দুই স্টক এক্সচেঞ্জ একীভূতকরণের আলোচনা চলছে বলে জানান।
মমিমুল ইসলাম বলেন, 'দুইটা বা তিনটা করে স্টক এক্সচেঞ্জ ৯০ এর দশকে বা ২০০০ এর শুরুর দিকে ছিল। সেক্ষেত্রে ওইটাও আমাদের ভাবনার বিষয় হতে পারে যে দুইটা এক্সচেঞ্জ একসাথে হলে তা মার্কেটের জন্য কি আরও বেশি ইফিসিয়েন্সি করতে পারে কি না? সেটা আমরা উনাদের সাথে কথা বলবো।'
আইন সংস্কার, শক্তিশালী মৌলভিত্তির কোম্পানি তালিকাভুক্তি, কারসাজি বন্ধ ও সঠিক পরিচালনার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে পুঁজিবাজারকে গতিশীল করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন বক্তারা।