পবিত্র স্থান হিসেবে খ্যাত জেরুজালেম। যাকে নিজেদের তীর্থস্থান হিসেবে দাবি করে আসছে মুসলিম, খ্রিষ্টান ও ইহুদি সম্প্রদায়। বিশ্বজুড়ে যখন বড়দিনের বর্ণিল আয়োজন তখন ইসরায়েলি বর্বরতায় গাজায় পদদলিত হচ্ছে মানবতা।
মুসলিমদের ওপর বর্বর নির্যাতন চালালেও বড়দিন উপলক্ষে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের উপহার দেয়া হচ্ছে ক্রিসমাস ট্রি। জেরুজালেম পৌরসভার বিতরণ করা এসব গাছ হাসিমুখেই সংগ্রহ করছেন খ্রিস্টানধর্মাবলম্বীরা। তারা আশা, অন্ধকার ভেদ করে বিশ্বব্যাপী শান্তির পাশাপাশি আলো নিয়ে আসবে বড়দিন।
সান্তা সাজে একজন বলেন, ‘এই বছরটি ভিন্ন বছর। বড়দিন শান্তির বার্তা বড়ে আনুক। বড়দিনের শুভেচ্ছা সবাইকে, আমি তোমাদের ভালোবাসি।’
শুধু গাজা উপত্যকা নয় ইসরাইলি বাহিনীর আগ্রাসনের শিকার হওয়া লেবাননেও চলছে বড়দিনের প্রস্তুতি। মধ্যপ্রাচের এই দেশটিতে ৬৭ শতাংশ বেশি ইসলাম ধর্মের অনুসারী থাকলেও দলমত নির্বিশেষে সকলেই মেতেছেন উৎসবে।
রাজধানী বৈরুতের শপিংমল, রেস্টুরেন্টসহ শহরের সব স্থানেই বর্ণিল আলোকসজ্জা। যুদ্ধের কালো ছায়ায় ম্লান হয়ে উৎসব হোক রঙিন এই প্রত্যাশা স্থানীয়দের।
এক নাগরিক বলেন, ‘আমাদের জীবনে অনেক প্রতিকূলতা রয়েছে। যুদ্ধের পর সংকট মোকাবিলা করে লেবাননে শান্তি ফিরে আসুক।’
আরেক লেবাননের নাগরিক বলেন, ‘সকল ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে লেবানিজরা ঘুড়ে দাঁড়াবে এবং চলতে থাকবে। আমরা ক্রিসমাসকে সুন্দরভাবে স্বাগত জানাই। মুসলিম, খ্রিষ্টান সবাই ক্রিসমাস একসঙ্গে পালন করবো।’
লেবানন আরো একজন বলেন, ‘এই বছর অনেক কঠিন পরিস্থিতি, নানা চ্যালেঞ্জ ছিল। সবকিছু সত্ত্বেও, আমরা উদযাপন করতে চাই, আমরা সুন্দর জীবন চাই। আমরা সবাই একসঙ্গে আনন্দে এবং শান্তিতে থাকতে চাই। আশা করছি আগামী বছরটি সবার জন্য আশার বছর হবে। লেবাননের জনগণ সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা সবার জীবন ভালোবাসায় পরিপূর্ণ হোক।’
এবার বড়দিনের আঁচ লেগেছে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ সিরিয়াতেও। প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার উৎসবে যোগ হয়েছে বাড়তি মাত্রা। দামেস্কে বসেছে ক্রিসমাস বাজার। ভীতিহীন ভাবেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন সবাই।
রেস্তোঁরাসহ সকল স্থাপনাতে বর্ণিল আলোকসজ্জা। পতাকা হাতে সবার মনেই ছিল উচ্ছ্বাস। সকল সম্প্রদায়ের মানুষকে নিয়ে সিরিয়ার পুনর্গঠনে কাজ করবে নতুন সরকার এমন আশা সকলের।
সিরিয়ার এক নাগরিক বলেন, ‘জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না। সিরিয়া সব সম্প্রদায় এবং ধর্মের দেশ। আমরা সবাইকে নিয়ে সিরিয়া পুনর্গঠন শুরু করব। কোনো কিছুতে এখন ভয় পাই না, আমরা সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে ছিলাম। আশা করছি আগামীতে আরো ভালো হবে।’
বড়দিনের রঙিন সাজে সেজেছে কসোভোর রাজধানী, প্রিস্টিনা। মুসলিম প্রধান দেশটিতে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের প্রদর্শনে চলতি বছর বড়দিনের দেশটি সেজেছে রং বেরঙের আলোকসজ্জায়। ডিজে পার্টিসহ শপিংমল, পার্কগুলোতে লেগেছে উৎসবের আমেজ।
কসোভোর এক পথচারী বলেন, ‘প্রত্যেকেরই আলাদা আলাদা ধর্ম রয়েছে। আমরা সবাই উৎসব একসঙ্গে উদযাপন করবো। আমরা সকল ধর্মকে সম্মান করি। পুরো আয়োজনটি খুব সুন্দরভাবে সাজানো হয়েছে। অনেক মানুষ উৎসবে অংশ নিয়েছেন। বেচাবিক্রি খুব ভালো।’
কসোভোর ৯৫ শতাংশেরও বেশি মানুষ ইসলাম ধর্মের অনুসারী।