দেশে এখন
0

শীত নিবারণে দোকানে ভিড় উচ্চবিত্তের, সুবিধাবঞ্চিতরা চেয়ে তাদের দিকে

অগ্রহায়ণের শেষ দিকে রাজধানীতে পড়তে শুরু করেছে শীত। যদিও শীত মানে না ধনী দরিদ্রের কোনো পার্থক্য। শীত নিবারণে জন্য নতুন পোশাক আর প্রসাধনী কিনতে একদিকে বিপণি বিতানে ভিড় করছেন সমাজের উচ্চবিত্ত শ্রেণি অন্যদিকে তাদের সাহায্য পানেই চেয়ে আছে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত ও দরিদ্র মানুষ। সমাজ বিজ্ঞানীরা বলছেন, রাষ্ট্রীয় সকল সুরক্ষার বাইরে থাকা এই মানুষের জীবনযাপন দিনকে দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে রাষ্ট্রের পাশাপাশি বাড়তে হবে ব্যক্তিপর্যায়ের উদ্যোগ।

কমলাপুর স্টেশনে কোনো রকমে মাথাগুজে থাকেন ষাটোর্ধ্ব নারী সান্তাহার। নির্ঘুম শীতের রাতে কেবলই টিকে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা তার। সামনে তীব্র শীতে কী হবে সে দুশ্চিন্তাও চোখে-মুখে।

স্টেশনে ঠাঁই পাওয়া তার মতো বাস্তুহারা মানুষগুলো জানে শীতের রাত আর সুবেহ সাদিকের দূরত্ব কতটা দীর্ঘ। শীর্ণকায় শরীর, মলিন কাপড় জড়িয়ে রাতটুকু পার করতেই যেন সবটুকু চেষ্টা-ফিকির। শীত নিবারণে আর কী কী প্রস্তুতি তাদের?

সান্তাহার বলেন, 'টুকিটাকি জামাকাপড় কিনি, এটাই পড়ি। আর একটা পাতলা চাদর কিনেছি রাতে কাটানোর জন্য। আর কম্বল দিলে একটা কম্বল পাবো।'

স্টেশনে রাতযাপন করা অন্য একজন বলেন, 'কিছু নেই, শুধু পাতলা একটা কাপড় গায়ে দিয়ে থাকি।'

সামান্য উপার্জন আর খাদ্য যোগাড়ের লড়াইয়ে, স্ত্রী সন্তানের জন্য শীতের নতুন পোশাক কিংবা দেহের যত্নে প্রসাধনী যোগারের সার্মথ্য নেই অনেকেরই।

একজন রিকশাচালক বলেন, 'একটা কিনাতে গেলে আরেকটা কেনা হয় না। তখন না খেয়ে থাকতে হয়। আমাদের রিকশা চালিয়ে এগুলো কেনা সম্ভব না।'

সব মিলিয়ে বাস্তবতা এটাই, সামর্থ্যবান কেউ যদি হাত বাড়িয়ে না দেয়, তাহলে ছিন্নমূল, হতদরিদ্র এই মানুষদের বেঁচে থাকার লড়াইয়ে শীত নিবারণ করা সম্ভব নয়। যদিও সমাজের অন্য প্রান্তের চিত্র এমন নয়।

শহরের অভিজাত এলাকার দোকানে দোকানে শোভা পায় বাহারি শীতের পোশাক। থরে থরে সাজানো প্রসাধনীও। শীতের শুরুতেই কেনাকাটায় ভিড়। এখানে আসা ক্রেতাদের কাছে জানাতে চাওয়া, এবারের শীতের কেনাকাটায় কত টাকা বাজেট তাদের?

একজন ক্রেতা বলেন, '১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে পরিবারের সবার জন্য বাজেট রেখেছি।'

অন্য একজন ক্রেতা বলেন, 'দেশি জিনিসের প্রতি আগ্রহী থাকলে কম বাজেটেও পুষিয়ে নেয়া সম্ভব। আর বিদেশে পণ্যের প্রতি আগ্রহী থাকলে বেশি খরচ হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকার বেশি লেগে যাবে।'

আর্থিক সক্ষমতা কীভাবে সমাজের দুই প্রান্তের মানুষের জীবনযাপনে ব্যবধান করে তা স্পষ্ট। সমাজ বিশ্লেষকরা বলছেন, রাষ্ট্রীয় সকল সুরক্ষার বাইরে থাকা মানুষের জীবনযাপন দিনকে দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। ধনী গরিবের বৈষম্য কমিয়ে সবার স্বাভাবিক জীবনের জন্য ভূমিকা রাখতে হবে রাষ্ট্রকেই।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. ফারহানা জামান বলেন, 'এখন রাষ্ট্রের সময় এসেছে যে, এই ধরনের এক্সট্রিম টেম্পারেচার ফল যখন করবে তার জন্য আগে থেকেই একটা প্ল্যান করা। শীতবস্ত্র বিতরণ থেকে শুরু করে তাদের হিটিং সিস্টেমটা কী হবে? সবকিছু পরিকল্পনা করে রাখা। যেমন সাইক্লোন আসলে তাদের একটা জায়গায় সরিয়ে নেই। তেমনি কোল্ড ওয়েভ তাদের তাদের আলাদা জায়গায় সরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করা।'

২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের পর সবার স্বপ্ন শোষণ-বৈষম্যহীন এক বাংলাদেশের। সেখানে নাগরিকদের অসম জীবনযাপন কোনোভাবেই কাম্য নয় বলছেন সমাজ বিশ্লেষকরা।

এসএস