শিল্প-কারখানা
অর্থনীতি
0

আওয়ামী সরকারের পক্ষপাতদুষ্ট ও একচেটিয়া নীতির কারণে সংকটে নির্মাণ খাত

গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকার ও তাদের সুবিধাভোগীদের পলায়নের প্রভাব পড়েছে নির্মাণ সামগ্রীর বাজারে। শ্রমিক ও খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, আবাসন ও সরকারি প্রকল্পে ধীরগতি কিংবা বন্ধ হওয়া এর বড় কারণ। শিল্প মালিক ও ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, গত সরকারের পক্ষপাতদুষ্ট ও একচেটিয়া নীতির কারণে সংকটে পড়েছে নির্মাণ খাত। এছাড়া সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাও বাড়িয়েছে শঙ্কা। সমাধানে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি প্রকল্পগুলো চালুর পরামর্শ সংশ্লিষ্টদের।

রাজধানীর বড় আবাসন প্রকল্পের একটি আফতাব নগর। জুলাই অভ্যুত্থানের পর এখানকার অধিকাংশ প্রকল্পেই চলে এসেছে ধীরগতি, কোনোটির কাজ আবার বন্ধ হয়ে গিয়েছে। শুধু আবাসন খাতেই নয়, সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ বন্ধ হওয়ায় ধস নেমেছে নির্মাণ সামগ্রীর বাজারে।

নির্মাণ শ্রমিকরা বলছেন, গণঅভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও তাদের অনেক সুবিধাভোগীর পলায়নের কারণেই এমনটা ঘটেছে।

একজন শ্রমিক বলেন, 'সরকারি দল ক্ষমতায় থাকলে অবশ্যই তাদের ক্ষমতা একটু বেশি থাকে। সব সরকারি কাজ তাদের আয়ত্তে থাকে।'

অন্য একজন শ্রমিক বলেন, 'অনেক সরকারি চাকরিজীবী, আমলাদের মধ্যে অনেকের ফ্ল্যাটের কাজ চলছিল। এখন তারা হয়তো গা ঢাকা দিয়েছে বা ঠিকমতো পেমেন্ট করছে না। আসলে কোম্পানি তো মূলত পেমেন্টের উপর নির্ভর করে।'

নির্মাণ খাতের গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক উপাদান রড, বালু, ইট, সিমেন্ট, পাথরের ব্যবসায়ও নেমে এসেছে স্থবিরতা। রাজধানীর ইট-বালুর বাজারে দেখা গেলো, অলস সময় পার করছেন শ্রমিকরা। ঘুরেফিরে, তাদের কাছেও এই স্থবিরতার প্রায় একই জবাব।

একজন শ্রমিক বলেন, 'এখন আর বেশি কাজকাম হয় না। আগে ইনকাম করতাম দিনে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। আবার সেটা মাঝে মাঝে এক হাজারও ইনকাম করা যেতো। এখন আর তেমন হয় না, এখন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা হয়। তাও সেটাতে অনেক বেশি কষ্ট হয়।'

প্রান্তিকের এই প্রভাব পড়েছে উৎপাদক পর্যায়েও। উৎপাদন কমিয়েও বিপুল লোকসান গুণতে হচ্ছে ইস্পাত মালিকদের।

সিএসআরএম'র চেয়ারম‍্যান ও ব‍্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, 'এখন যে সময়টা আমরা পার করছি তা হচ্ছে সারভাইভের সময়। এই সময় আসলে আমরা নিজেরাও প্ল্যানিং করে একটা জায়গায় আসতে পারছি না। আমরা কোনোভাবেই প্রোডাকশন খরচ কিন্তু কমাতে পারছি না। বরঞ্চ প্রোডাকশন খরচ আরও বেড়েছে।'

ইস্পাত ও সিমেন্ট শিল্প মালিক সমিতির নেতারা বলছেন, ব্যাংক ঋণ, ডলার সংকট ও বিগত সরকারের একচেটিয়া ব্যবসায়ী নীতির কারণেই ক্ষতির মুখে পড়েছে নির্মাণ শিল্প। সঙ্গে আছে সাম্প্রতিক সময়ের নানা অনিশ্চয়তা।

বাংলাদেশ স্টিল মিলস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ ফজলুর রহমান বকুল বলেন, 'সরকারের উন্নয়ন কাজ তো সব বন্ধ। যেমন আগের সরকার লুটপাটের নামে অনেক বড় বড় মেগা প্রজেক্ট সব বিভিন্ন ধরনের প্রজেক্ট নিয়েছিল। ওগুলোর কোনোগুলো প্রায় শেষ পর্যায়ে, কিছু কিছু প্রজেক্ট আছে যেগুলোর অনেক কাজ বাকি আছে। তো এগুলো তো আর এখন চলমান নেই।'

সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্ বলেন, '৫০০ শতাংশ ড্রপ করেছে আগস্টের পর থেকে আজও পর্যন্ত। আমাদের সিমেন্টের সব কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করে আনতে হয়। আমাদের কিন্তু পেছনের যে ইনভলভমেন্ট, ইনভেস্টমেন্ট সবকিছু আগের মতো আছে।'

সংকট উত্তরণে অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রুত সময়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরকারি প্রকল্পগুলো চালুর পরামর্শ মালিক সমিতির নেতাদের। পাশাপাশি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপরও জোড় দেন তারা।

সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্ বলেন, 'রাজনৈতিক সরকার যখন এসে পুরোদমে দেশের উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের জন্য পরিকল্পনা করবেন তাহলেই একমাত্র আমাদের এই সিমেন্টের এই ড্রপ করা গ্রাজুয়েলি ইম্প্রুভ হবে।'

বাংলাদেশ স্টিল মিলস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ ফজলুর রহমান বকুল বলেন, 'সরকার নিজের থেকে তিন বিলিয়ন ডলার নিজের থেকেই ঋণ পরিশোধ করেছে। এরকম যদি অর্থনৈতিক চাকা চালু হয়ে যায় তাহলে মানুষের সবকিছুই স্বাভাবিক হবে।'

খাত সংশ্লিষ্টদের আশা ডলার সংকট, সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ ও বন্ধ প্রকল্প চালু হলেই ঘুরে দাঁড়াতে পারে নির্মাণ খাত।

এসএস