আজ (রোববার, ১ ডিসেম্বর) তেজগাঁও কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এ রিপোর্ট হস্তান্তর করেছেন কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
কমিটি জানায়, শেখ হাসিনার শাসনামলের দুর্নীতি, লুণ্ঠন ও ভয়ংকর রকমের আর্থিক কারচুপির যে চিত্র রিপোর্টে পাওয়া গেছে, তা আতঙ্কিত হওয়ার মতো।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ইউনূস এই যুগান্তকারী কাজের জন্য কমিটিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘এটি চূড়ান্ত হওয়ার পর এটি জনসাধারণের জন্য প্রকাশ করা উচিত এবং স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করে শিক্ষার্থীদের পড়ানো উচিত।’
তিনি বলেন, ‘এটি একটি ঐতিহাসিক দলিল। জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর যে অর্থনীতিকে যে ভঙ্গুর দশায় আমরা পেয়েছি, তা এই রিপোর্টে উঠে এসেছে। জাতি এই নথি থেকে উপকৃত হবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের গরীব মানুষের রক্ত পানি করা টাকা যেভাবে তারা লুণ্ঠন করেছে তা আতঙ্কিত হওয়ার মতো। দুঃখের বিষয় হলো, তারা প্রকাশ্যে এই লুটপাট চালিয়েছে। আমাদের বেশিরভাগ অংশই এর মোকাবিলা করার সাহস করতে পারেনি। পতিত স্বৈরাচারী শাসনামলে ভয়ের রাজত্ব এতটাই ছিল যে বাংলাদেশের অর্থনীতি পর্যবেক্ষণকারী বহুপাক্ষিক সংস্থাগুলোও এই লুণ্ঠনের ঘটনায় অনেকাংশে নীরব ছিল।’
সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ ছাড়াই কমিটি স্বাধীনভাবে কাজ করেছে বলে জানান কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
তিনি বলেন, ‘সমস্যাটি আমরা যতটা ভেবেছিলাম তার চেয়েও গভীর। এই ৩০ অধ্যায়ের ৪০০ পৃষ্ঠার দীর্ঘ শ্বেতপত্রে উঠে এসেছে কীভাবে ক্রোনি পুঁজিবাদ অলিগার্কদের জন্ম দিয়েছে, কীভাবে তারা নীতি প্রণয়ন নিয়ন্ত্রণ করেছে।’
কমিটির সদস্য মুস্তাফিজুর রহমান জানান, তারা ২৯টি প্রকল্পের মধ্যে সাতটি বড় প্রকল্প পরীক্ষা করে দেখেছেন। প্রতিটিতে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় হয়েছে। ২৯টি বড় প্রকল্পে মোট ব্যয় হয়েছে ৮৭ বিলিয়ন ডলার বা ৭,৮০,০০০ কোটি টাকা।
পরীক্ষা করা সাতটি প্রকল্পের আনুমানিক প্রাথমিক ব্যয় ছিল ১,১৪,০০০ কোটি টাকা। অতিরিক্ত উপাদান যোগ করে, জমির দাম বেশি দেখিয়ে এবং ক্রয়ের ক্ষেত্রে হেরফের করে প্রকল্পের ব্যয় সংশোধিত করে ১,৯৫,০০০ কোটি টাকা করা হয়।
তিনি বলেন, ‘ব্যয়ের সুবিধা বিশ্লেষণ না করেই প্রকল্পের ব্যয় প্রায় ৭০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।’ অর্থ পাচারে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে বিচারকাজ শুরুর পরামর্শও দেন তিনি।
কমিটির আরেক সদস্য অধ্যাপক এ কে এনামুল হক বলেন, ‘গত ১৫ বছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ৭ লাখ কোটি টাকার বেশি ব্যয় হয়েছে এবং এর ৪০ শতাংশ অর্থ আমলারা লুটপাট করেছে।’
কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আবু ইউসুফ জানান, বিগত শাসনামলে কর অব্যাহতির পরিমাণ ছিল দেশের মোট জিডিপির ৬ শতাংশ। এটি অর্ধেকে নামিয়ে আনা গেলে শিক্ষা বাজেট দ্বিগুণ এবং স্বাস্থ্য বাজেট তিনগুণ করা যেতে পারত বলে জানান তিনি।
শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য এম. তামিম বলেন, ‘বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৩০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে এবং ১০ শতাংশ যদি অবৈধ লেনদেন ধরা হয়, তাহলে পরিমাণ হবে কমপক্ষে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।’
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন সাথী, সিনিয়র সচিব লামিয়া মোর্শেদ। প্রতিবেদনটি শিগগিরই জনসাধারণের জন্য প্রকাশিত হবে।