রাজধানীর রামপুরা একরামুন্নেছা ডিগ্রি কলেজের ছাত্র ইউসুফ। ৯ জুলাই নতুন বাজার এলাকায় ছাত্র জনতার মিছিলে পুলিশের ছোড়া গুলি তার নাক ছিদ্র করে ডান চোখ হয়ে মাথার খুলিতে আটকে যায়।
ইউসুফ বলেন, ‘গুলিটা এসে আমার মাথার ডান পাশে লাগে। এরপর আমি ধীরে ধীরে পিছনের দিকে পড়ে যায়।’
এ ঘটনায় তার ডান চোখের আলো প্রায় নিভে গেছে। ১ মাসের বেশি ছিলেন লাইফ সাপোর্টে। দীর্ঘ সময় শয্যাশায়ী থাকায় শরীরের নানা অংশ অচল হয়ে পড়ে। এখন চিকিৎসা চলছে সাভারে পক্ষাঘাত পুনর্বাসন কেন্দ্রে।
ইউসূফ বলেন, ‘আন্দোলন যখন শাহজাদপুর যায় তখন পুলিশ, ছাত্রলীগ সবাই আমাদের উপর আক্রমণ করে। রুমমেট ছিল ওকে বলতেছিলাম আশেপাশে মসজিদ থাকলে জুম্মার নামাজ পড়ে আসবো। ঠিক তখনই এসে গুলি লাগে।’
জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা ইউসূফের বিনামূল্যে দীর্ঘ অস্ত্রোপচার করেন নিউরোসার্জন ডা. মোহাম্মদ সুজন শরীফ। জানালেন, এমন রোগীর ক্ষেত্রে ফিরে আসার সম্ভাবনা খুবই বিরল।
নিউরোসার্জন ও স্পাইন বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ সুজন শরীফ বলেন, ‘ইউসূফকে যখন দেখলাম তখন সে পুরো অজ্ঞান ছিল। কোনো সেন্সই ছিল না তার। তার এই অপারেশন করতে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টার মতো লাগে।’
বৈষম্যবিরোধী লড়াইয়ের গণজোয়ারে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাবার আগেই, ইউসুফের মত জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়াতে হয় অনেক কিশোর তরুণকে। আর এই সংকটকালে, ঢাকা মেডিকেলসহ কয়েকটি হাসপাতালে চিকিৎসা কাজেও বাধা দেয়াসহ হামলা চালায় ছাত্রলীগ। আর এসব উপেক্ষা করেও সেবা থেকে যেসব হাসপাতাল পিছিয়ে যায়নি, তাদের পড়তে হয় নানা আইনি ঝামেলায়।
ধানমন্ডির ইবনে সিনা হাসপাতাল পরিচালক মো. আনিসুজ্জামান বলেন, ‘পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন থেকে নিষেধ ছিল এইসব রোগীদের সেবা দেয়া যাবে না। তারা বার খোঁজ নিচ্ছিল আমরা কোনো সেবা দিচ্ছি কিনা। লাস্টে তারা আমাকে ধরার জন্য আসছে যে আমি মূল হোতা। আমি তাদের বিভিন্নভাবে সেবা দিচ্ছি।’
এদিকে, ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে আহত হয়ে হাসপাতালে যাওয়াদের চিকিৎসা না দেয়ারও অভিযোগ রয়েছে কয়েকটি হাসপাতালের বিরুদ্ধে। সরকারি নির্দেশনা মেনে দেয়া হয়নি আহতদের বিনামূল্যে সেবা।