কীর্তনখোলা নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা পোর্ট রোড মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র। যা বরিশালের একমাত্র বড় পাইকারি মাছের বাজার।
এক সময় বাজারের ঘাটে সারি সারি মাছের ট্রলারের দেখা মিললেও এখন সে চিত্র পুরোটাই পালটে গেছে। ইলিশের জন্য বাজারটি পরিচিত থাকলেও এখন মৌসুমেও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত রুপালি ইলিশ। ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে মৎস্য পাইকারি অবতরণ কেন্দ্রের আগের সেই জৌলুস।
আগে মৌসুমে প্রতিদিন এক থেকে দুই হাজার মণ মাছ সরবরাহ হতো এই বাজারে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে পাঠানো হতো দেশের বিভিন্ন স্থানে। বর্তমানে ১৬ আনার ইলিশ মাছের সরবরাহ ১ আনাতে ঠেকেছে। দেখা নেই নদীর অন্যান্য প্রজাতির মাছেরও। বর্তমানে বাজারের অস্তিত্ব টিকে আছে চাষের মাছের ওপর নির্ভর করে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিভিন্ন জায়গায় মাছের মোকাম গড়ে ওঠায় এই বাজারে মাছের সরবরাহ কমেছে। ইলিশের সরবরাহ কম থাকায় লোকসানের মুখে তারা।
পোর্ট রোড মৎস্য আড়তদার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ইয়ার হোসেন সিকদার বলেন, ‘আগের ষোলো আনা থেকে মাত্র এক আনা ব্যবসা রয়েছে। আগে এখানে ২ থেকে ৩ হাজার মন মতো মাছ বিক্রি করেছি এখন খুব বেশি হলে ৫০০ থেকে ৭০০ মণ মাছ বিক্রি হচ্ছে।’
যেখানে ইলিশের মৌসুমে আগে দম ফেলার সুযোগই থাকতো না, সেখানে এখন বেশিরভাগ সময়ই অলস সময় পার করছেন শ্রমিকরা। এখন সারাদিনে রোজগার হচ্ছে মাত্র দুই থেকে তিনশো টাকা।
বাজারে মাছের সরবরাহ কমায় প্রভাব পড়েছে বরফ কলেও। বরিশালের ৪০ থেকে ৪৫টি বরফকলের অনেকগুলোই এর মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে।
বাজারে ক্রেতা উপস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও ইলিশের দাম শুনে হতাশ তারা। ফলে রুপালি ইলিশের স্বাদ পাচ্ছেন না অনেকেই।
এদিকে, বাড়তি দামে ইলিশ বিক্রি রোধে মূল্য তালিকা টানানোর নির্দেশনা দিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ালে ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক অপূর্ব অধিকারী বলেন, ‘যদি কেউ মূল্য তালিকা না দেয় বা কারসাজি করে থাকে তাহলে আমরা আমাদের আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেবো।’
মৎস্য কর্মকর্তা বলছেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে চলতি বছর মাছের সরবরাহ কিছুটা কমেছে। সরবরাহ স্বাভাবিক হলে দামও নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
বরিশালের মৎস্য কর্মকর্তা বিমল চন্দ্র দাস বলেন, ‘বৈরী আবহাওয়ার কারণে চলতি বছর আমরা সাগরের ইলিশ পর্যাপ্ত পরিমাণে পাই নাই। এজন্য আমাদের ইলিশ আহরণ কমেছে। তবে সরবরাহ স্বাভাবিক হলে দামও নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।’
বরিশাল পোর্ট রোড মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ১৭০টি আড়তে আগে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার মাছ বেচাকেনা হলেও বর্তমানে তা ঠেকেছে মাত্র ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকায়।