দেশের ব্যাংকিং খাতের সবচেয়ে বড় ব্যাংক বলা হয়ে থাকে ইসলামী ব্যাংককে, ২০১৭ সালে যার দখল নেয় এস আলম গ্রুপ। এই ব্যাংক থেকে নামে বেনামে নেয়া হয় ১ লাখ কোটি টাকার বেশি ঋণ। আর এতে তারল্য সংকটে পড়ে ব্যাংকটি।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক উদ্যোগ নিয়ে এস আলম মুক্ত করে ইসলামী ব্যাংকসহ আরো পাঁচটি ব্যাংক। শুরু হয় পুনরুদ্ধার আর সংস্কার। কিন্তু অর্থ সহায়তা না থাকায় গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে হিমশিম খায় ব্যাংকটি। পরে সবল ব্যাংকের সহায়তায় ও রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ায় কিছুটা ঘুরে দাঁড়ায় তারা।
ইসলামী ব্যাংক থেকে এস আলমের ৮০ শতাংশ ঋণ নেয়া ও এলসি খুলে পেমেন্ট না করায় ২০ হাজার কোটি টাকা ঘাটতিতে পড়েছে ব্যাংকটি। তবে গত তিন মাসে ১০ হাজার কোটি টাকা রেমিট্যান্স আসায় কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানান ব্যাংকটির স্বতন্ত্র পরিচালক। আজ (সোমবার, ১৮ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সংবাদ সম্মেলনে তাই তুলে ধরলেন।
এমন অবস্থায়, যে ঘাটতি রয়েছে তা এস আলমের শেয়ার বিক্রি ও নতুন শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে পুনরুদ্ধার করা হবে বলে জানান তিনি। জানান, ব্যাংকটির ৪টি নিরীক্ষার মাধ্যমে এস আলমসহ সব অনিয়ম ও দুর্নীতি বের করা হচ্ছে ।
ইসলামী ব্যাংকের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান ওয়াবেদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, ‘তারা যে এলসি খুলেছি আমরা সেগুলোর পেমেন্ট করে দিয়েছি। এখানে আমাদের প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার মতো গ্যাপ ক্রিয়েট হয়েছে। এই ২০ হাজার কোটির মধ্যে এস আলমের শেয়ার হচ্ছে ১৬শ' কোটি যেটা আমরা মামলা করে বিক্রির উদ্যোগ নিবো।’
তবে এস আলমের নেয়া সব টাকা ফেরত না আসলেও ব্যাংকটির সম্পদ বাড়িয়ে ঘাটতি কমিয়ে আনা হবে বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
তিনি বলেন, ‘আমরা তো ৮০ হাজার কোটি টাকার পুরোটা পাওয়া যাবে না। একটা পার্ট পাওয়া যাবে হয়ত এইটাই ফ্যাক্ট। সব টাকা ফেরত না আসলেও ব্যাংকটির সম্পদ বাড়িয়ে ঘাটতি কমিয়ে আনা হবে।’
গভর্নর আশ্বস্ত করেন, এস আলম, বেক্সিমকো বা নাসা গ্রুপের মত অনিয়ম করা কোনো কোম্পানি বন্ধ করা হবে না। তবে, দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতের শাস্তির আওতায় আনতে কোনো ছাড় দেয়া হবে না।
ওয়াবেদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, ব্যক্তি এস আলম আর এস আলম লিমিটেড কিন্তু এক না। শিল্প কারখানাগুলো এই দেশে বিনিয়োগ করে মেশিন আমদানি করেছে। উৎপাদন খাত জিডিপি একটা বড় ভূমিকা রাখে।
ইসলামী ব্যাংকের মত তারল্যের বড় সংকট রয়েছে এস আলমের আরো পাঁচ ব্যাংকে, যেগুলো পুনরুদ্ধারে নতুন কৌশল নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন গভর্নর।