মাঠ থেকে আমন ধান কাটার পর আলু রোপণ করেন উত্তরাঞ্চলের কৃষক। এরইমধ্যে কিছু জমিতে আলু রোপণের প্রস্তুতি চলছে। বাকি জমিগুলোতে সপ্তাহ দুয়েক পর পুরোদমে চলবে আলু রোপণের কাজ।
কিন্তু এরমধ্যেই উত্তরাঞ্চলে দেখা দিয়েছে আলু বীজের সংকট। ৫৬ টাকার বীজ কৃষককে কিনতে হচ্ছে ৯০ থেকে ১২০ টাকায়। লাগামহীন দর এবং বীজের অনিশ্চয়তায় উৎপাদন কমার শঙ্কা আলুচাষিদের।
বীজ সংকটের বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের দাবি ভালো দাম পাওয়ায় অনেক কৃষকই আগেভাগে আলু বিক্রি করেছেন। আর বিএডিসির ডিলারদের দাবি চাহিদার তুলনায় এবার বীজ কম।
জয়পুরহাট বিএডিসি বীজ ও সার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নাজমুল হক বলেন, 'কোম্পানি এবং বিএডিসি থেকে বীর সরবরাহ করা হচ্ছে। বিএডিসি নয় হাজার মেট্রিকটন। বিএডিসি এবং অন্যান্য কোম্পানি মিলিয়ে সব মিলে ২৬ হাজার মেট্রিকটন আমাদের ওখানে বীজ পাওয়া যায়। বাকি ১০ থেকে ১৬ হাজার মেট্রিকটন বীজের ঘাটতি আমাদের জয়পুরহাটে রয়ে গেছে।'
বগুড়া বিএডিসি বীজ ও সার ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বেলাল উদ্দিন বলেন, '৩০ তারিখের পর বিভিন্ন জায়গা থেকে বীজ নিয়ে আসছে। এসে আমরা শহরের মধ্যে কেউ নেই আমরা। কারণ শহরের মধ্যে তো এত দামে বিক্রি করতে পারবো না। বিক্রি করলে সবাই এসে ধরবে। আমি কাকে উত্তর দেবো। এটা তো প্রকাশ্যে দুই হাজার ৬০০ বা দুই হাজার ৭০০ টাকার আলু তিন হাজার ৫০ থেকে চার হাজার টাকা বিক্রি করা যায়?'
তিনি বলেন, 'পুরো বাংলাদেশই তো বলে সিন্ডিকেট? কোথাও সিন্ডিকেট নেই। সিন্ডিকেট হলো এইটুকু যে ডিমান্ড মতো আলু পাওয়া যাচ্ছে না।'
গত মৌসুমে রোগ বালাইয়ের আক্রমণ বেশি হওয়ায় সরকারিভাবে চাহিদা মতো বীজ না পাওয়া এবং উচ্চ ফলনশীল আলুর জাত আসায়, সেসব বীজ কেনার আশায় কৃষক তাদের পুরনো জাতের আলু বীজ না রাখায় এমন সংকটের সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন বিএডিসি কর্মকর্তা।
বগুড়া বিএডিসির উপ-পরিচালক জাকির হোসেন বলেন, 'গতবছরের থেকে এ বছর আমাদের কিছু কম ছিল, এটা একটা কারণ হতে পারে। নতুন নতুন জাত আসাদে কৃষকরা যখন দেখতে যেহেতু এগুলোতে ফলন বেশি হচ্ছে, তারা তাদের ট্রেডিশনাল চাষাবাদ থেকে বের হয়ে আসছে। বের হয়ে এসে তারা এখন এসমস্ত জাতের দিকে ঝুঁকছেন। যেহেতু তারা এটা করতে চাচ্ছেন কিন্তু দ্রুত তো এত পরিমাণ বীজ উৎপাদন করা সম্ভব না।'
অধিক আলু উৎপাদনকারী বগুড়া এবং জয়পুরহাট জেলায় এবার ৯৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলু রোপণের জন্য ১ লাখ ৪৫ হাজার টন বীজ প্রয়োজন। বিপুল চাহিদার বিপরীতে বিএডিসি সেখানে সরবরাহ করতে পারছে মাত্র ৬ হাজার ৪শ টন। যা চাহিদার মাত্র ৯ শতাংশ।