পাকিস্তানের করাচি থেকে ৩৬টি জাহাজে ২৯৭ একক কনটেইনার নিয়ে গত সোমবার চট্টগ্রাম বন্দরে ভেড়ে ইউয়ান জিয়াং ফা জান নামে একটি জাহাজ। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর এই প্রথম কোনো জাহাজ সরাসরি করাচি থেকে বাংলাদেশে আসে। সঙ্গত কারণেই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এটি নিয়ে অনলাইন ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় নানা ধরনের আলোচনা চলছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে অস্ত্র আসার গুজবও।
ডিফেন্স সাইট নামে ফেসবুক পেজে দেখা যায়, অস্ত্র ও ট্যাংক আসার ছবি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে রিপাবলিক বাংলায় প্রচারিত এক কনটেইনার অস্ত্র এসেছে এমন সংবাদের ছবিও ছড়ানো হয়েছে। এছাড়া কূটনৈতিক মহল ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও পাকিস্তানের সাথে সরাসরি জাহাজ চালুর সংবাদ ফলাও করে প্রচার হয়। এমনকি কনটেইনার খালাসের সময় পরীক্ষা করতে চাওয়ায় ২ কাস্টমস কর্মকর্তার বদলির গুজবও ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকে।
এমন গুজবে ইমেজ সংকটে পড়তে পারে চট্টগ্রাম বন্দর। অনেকের প্রশ্ন- পাকিস্তান থেকে সরাসরি জাহাজ আসার মধ্য দিয়েই কি দেশটির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য শুরু? উত্তর হচ্ছে না। কারণ তথ্য বলছে, আগে থেকেই বছরে বাংলাদেশ-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য হয় ৫০০ থেকে ৮০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মতো। ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি ১০০ মিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। এরপর ২০২২-২০২৩ সালে হয় ৮৪ মিলিয়ন এবং ২০২৩- ২০২৪ অর্থবছরে ৫৪ মিলিয়ন ডলার রপ্তানি হয়।
তাহলে কি ছিলো জাহাজটিতে? কাস্টমসের নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, জাহাজটিতে আসা পণ্যে ১১৫ কনটেইনার সোডিয়াম কার্বনেট, ৪৬ কনটেইনার খনিজ পদার্থ, ৩৬ কনটেইনার চুনাপাথরসহ আলু ও পেঁয়াজ এসেছে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের উপ-কমিশনার সাইদুর রহমান বলেন, অধিকাংশ আইটেমই হচ্ছে এখানে পেঁয়াজ আছে, আলু আছে। ফেব্রিক্স আছে কিছু টেক্সটাইল কেমিক্যাল আছে।’
কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জানায়, আগে পাকিস্তান থেকে দুবাই, শ্রীলংকার বন্দর হয়ে পণ্য আনা নেয়া হতো পাকিস্তানে। এছাড়া নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনায় কন্টেইনারে আসা সব পণ্যই খুলে পরীক্ষা করা হতো, সে ঝামেলায় আমদানি রপ্তানির গতি মন্থর হয়।
তবে গত ২৯ সেপ্টেম্বর পাকিস্তান থেকে আসা পণ্য শতভাগ পরীক্ষা ছাড়াই ছাড়ের অনুমোদন দেয় এনবিআর। এ ঘটনায় ২ কাস্টমস কর্মকর্তার শাস্তিমূলক বদলির বিষয় প্রচার হয়, তা সত্য নয় বলে দাবি কাস্টমসের।
সাইদুর রহমান বলেন, ‘সিলেক্টিভ ক্রাইটেরিয়া আছে। কোনগুলোতে রেইড হবে, কোনটা আমরা এক্সামিন করবো। এর বাইরে যদি কোনো নির্দিষ্ট তথ্য থাকে তাহলে গোয়েন্দা শাখা থেকে কমিশনের অনুমতি নিয়ে এগুলো এক্সামিন করা হয়।’
ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের বন্দর ঘুরে পাকিস্তানের পণ্য ও কাঁচামাল দেশে আসতো, এখন সরাসরি করাচি থেকে আসায় খরচ কমবে।
সিএন্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানি রিগ্যান বলেন, ‘এই যে সরাসরি জাহাজ চলে আসছে, আমাদের ব্যবসায়ীরা কস্টিং কমিয়ে নিয়ে আসতে পারবে। আমাদের দেশের যারা ভোক্তা, উদ্যোক্তা তারাও কম দামে পণ্যগুলো পাবে বলে আমি মনে করি।’
বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, পাকিস্তান থেকে আমরা ইয়ার্ন আনতে পারি, কিছু ফ্যাব্রিক্স আনতে পারি। যেহেতু আমরা আরএমজি বেইজড একটা এক্সপোর্টিং কান্ট্রি, সেজন্য যত বেশি আমরা র ম্যাটারিয়ালের সোর্স বাড়বে তত বেশি আমার জন্য মঙ্গল।’