কোমর ব্যথার রোগীদের চিকিৎসা সেবায় ইতিবাচক সাড়া মিললেও আধুনিক বিজ্ঞান কী বলছে এ চিকিৎসা নিয়ে, তা জানতে প্রশ্ন করা হয় ডিপিআরসি হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানের কাছে।
ডা. মো. সফিউল্যাহ প্রধান বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে আর্লি এক্সারসাইজ বিষয়ে সার্জনেরাও আমাদের সাথে একমত, এছাড়া আর্লি এক্সারসাইজ থিমটা এখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও গ্রহণ করেছে।’
তিনি আরো বলেন, 'কোমর ব্যথা বর্তমান বিশ্বে একটি বড় সমস্যা। তরুণ থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবাই জীবনের কোনো না কোনো সময়ে কোমরের সমস্যায় ভুগে থাকেন। অনেক সময় কোমর ব্যথা পায়ের দিকে চলে আসতে পারে। এরই সঙ্গে রোগীদের হাঁটা চলায় যদি ভুল থাকে তাহলে ব্যথা তীব্র থেকে তীব্রতর হতে পারে।'
ডা. মো. সফিউল্যাহ বলেন, ‘অনেকেই রাতে ঘুমানোর সময় বিছানায় একাত ওকাত হতে গেলে কোমরে ব্যথা হয় এবং পায়ের রগ টেনে ধরে। এছাড়া অনেক সময় কোমরের ব্যথা তলপেট পর্যন্ত ছড়িয়ে যায়। এরই সঙ্গে কোমরের সমস্যার জন্য আজকাল অনেকের দাম্পত্য জীবনের সমস্যা হয়, অনেকে চাকরি পর্যন্ত হারান। বর্তমানে সারা বিশ্বে এই জাতীয় রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। বিশেষ করে আমাদের যারা প্রবাসে আছেন তারা বিদেশ যাওয়ার কিছুদিন পরেই কোমরে সমস্যা নিয়ে দেশে ফিরছেন। ঠিক মতো কাজ করতে পারছেন না। এদিকে গবেষণায় দেখা যাচ্ছে প্রতি পাঁচজন মানুষের মধ্যে চারজনই জীবনের কোনো না কোনো সময়ে কোমর ব্যথায় ভুগেছেন।’
চিকিৎসকরা বলছেন, মূলত কোমরের সমস্যার অন্যতম কারণ হচ্ছে দৈনন্দিন জীবনে কাজকর্মে বা চলাফেরায় আমাদের করা ভুল ও বদ অভ্যাসগুলো। যেমন বেশিরভাগ মানুষই বসে কাজ করে আর ভুলভাবে বসে কাজ করা ক্ষতির কারণ হয়। এছাড়াও বসার ধরনের ভুল, শোবার ভুল, কাজের সময় সামনে ঝুঁকে কাজ করা ইত্যাদি কারণে কোমর ব্যথার তৈরি হতে পারে।
ডা. মো. সফিউল্যাহ প্রধান আরো জানান, আমাদের গ্রামগঞ্জের মা-বোনরা নিচে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পারিবারিক কাজ করেন আর কৃষকরা যেসব কাজ করে সেখান থেকেও আঘাত পেয়ে কোমরের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। অন্যদিকে নারীদের বিভিন্ন স্ত্রীরোগ জনিত সমস্যা ও পেটের রোগ থেকেও অনেক সময় কোমরের ব্যথা তৈরি হতে পারে।
ডিপিআরসির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান জানান, বর্তমানে কোমর ব্যথার চিকিৎসা একেবারেই সহজ। কোমর ব্যথার ক্ষেত্রে আমরা বলে যেটা থাকি প্রায় ৯০-৯৫ ভাগ রোগী অপারেশন ছাড়াই সুস্থ হওয়া সম্ভব। কেউ যদি দীর্ঘমেয়াদি কোমর ব্যথায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে দেরি না করে অবশ্যই দ্রুত রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা নিতে হবে।
তিনি জানান, কোমর ব্যথার বিষয়ে সতর্ক থাকার পাশাপাশি চিকিৎসকরা এখন বলছেন, ব্যথার কারণগুলো খুঁজে বের করা, এক্সারসাইজ করা এবং নিয়মিত ওজন মেইনটেইন করা, পরিমিত পানি খাওয়া বাধ্যতামূলক। এসব নিয়ম ও শোয়ার অভ্যাস ঠিক করলে অনেকাংশে কোমর ব্যথার রোগীরা ভালো হয়ে যায়। যদিও কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে কোমর ব্যথার জন্য ওষুধ খাওয়া লাগতে পারে, তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে তা খেতে হবে। আর মাত্র ১ থেকে ৫ শতাংশ রোগী ক্ষেত্রে অপারেশন প্রয়োজন হয়।
ডা. মো. সফিউল্যাহ প্রধান বলেন, ‘বেশিরভাগ রোগী যদি আমরা কনফার্ম ডায়াগনোসিস করি। কোমরে ব্যথার জন্য হাসপাতালে অ্যাডভান্স রিহ্যাব-ফিজিও চিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে। চিকিৎসক হিসেবে আমার পরামর্শ থাকবে কোমর ব্যথায় কষ্ট না পেয়ে রোগীকে বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে এবং নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে।