স্যুইং স্টেটগুলোর মধ্যে পেনসিলভেনিয়ার পর সবচেয়ে বেশি ইলেকটোরাল ভোট জর্জিয়া ও নর্থ ক্যারোলাইনায়। ১৬টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট ছাড়াও এবারের মার্কিন নির্বাচনের অনেক হিসাব নিকাশ নির্ভর করবে নর্থ ক্যারোলাইনার ওপর। ২০১৬ ও ২০২০, পরপর দু'টি নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্পকেই সমর্থন দিয়েছেন ক্যারোলাইনাবাসী। গেল নির্বাচনে ৭টি স্যুইং স্টেটের ৬টিতে জয় পেলেও নর্থ ক্যারোলাইনায় সুবিধা করতে পারেনি ডেমোক্র্যাট শিবির।
তাই, ৩৬টি ইলেকটোরাল ভোটের অঙ্ক মাথায় রেখে শনিবার জর্জিয়া ও নর্থ ক্যারোলাইনার মতো দু'টি স্যুইং স্টেটে প্রচারে সভা করেছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কামালা হ্যারিস। এদিন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধে দেহি রাজনৈতিক মনোভাবের সমালোচনা করে কামালা বলেন, ট্রাম্প ক্ষমতায় আসলে হোয়াইট হাউজে গিয়েই নিজের ব্যক্তিগত শত্রুদের পেছনে লাগবেন। কামালা আরও অভিযোগ করেন, দেশজুড়ে গর্ভপাত নিষিদ্ধ করার আগ পর্যন্ত ট্রাম্প শান্ত হবেন না।
ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কামালা হ্যারিস বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাজ এখনও শেষ হয়নি। তিনি দেশজুড়ে গর্ভপাত নিষিদ্ধ করবেন। জন্মনিয়ন্ত্রণের ওপরেও তিনি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারেন। তিনি আইভিএফ সংক্রান্ত চিকিৎসা সেবাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করবেন যেন গর্ভধারণকালে নারীদের ওপর স্টেটের নজরদারি আরও বাড়ানো যায়।’
প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করা ছাড়াও নর্থ ক্যারোনাইনায় নিজের পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন কামালা। গাজায় যুদ্ধ বন্ধ ও জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে গুরুত্ব দিলেও কামালার মূল বক্তব্য ছিল মধ্যবিত্তের অর্থনৈতিক মুক্তি ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ নিয়ে।
ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কামালা হ্যারিস বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট হলে জীবনের প্রত্যেকটি দিন কাজে লাগাতে চাই। মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য কর মওকুফের ব্যবস্থা করব যাতে যুক্তরাষ্ট্রের ১০০ মিলিয়নের বেশি নাগরিক উপকৃত হয়। যে সব গ্রোসারি ইচ্ছামতো নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় তাদের বিরুদ্ধে ফেডারেল নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরিকল্পনা আছে আমাদের। দেশের প্রতিটি নাগরিকের যেন ন্যায্য মূল্যে আবাসন সুবিধা ভোগ করতে পারে- সে জন্য লড়াই চালিয়ে যাবো।’
অন্যদিকে, স্বভাবসুলভ বিতর্কিত মন্তব্য আর প্রতিপক্ষকে কটাক্ষ করে একই দিনে নর্থ ক্যারোলাইনাবাসির সামনে হাজির হন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। গর্ভপাত ইস্যুতে কামালাকে সরাসরি আক্রমণ না করলেও প্রগতিশীল নারীদের উদ্দেশ্যে ট্রাম্প বলেন, আজকাল আর নারীর সৌন্দর্য নিয়ে প্রশংসা করা যায় না। ট্রাম্পের অভিযোগ, এমনটা করলে নাকি সাথে সাথে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়ে যাবে। এছাড়া, এদিন সভায় দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন সাবেক এই প্রেসিডেন্ট।
রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘নানা মহলের অপতৎপরতার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র প্রশ্নবিদ্ধ। তবে, ৫ নভেম্বর, ২০২৪ এর পর দেশের পরিস্থিতি আগের মতো থাকবে না। এটাই হবে আমেরিকার নতুন স্বাধীনতা দিবস। আমরা আবার স্বাধীন হব, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করবো।’
একদিকে কামালা যখন মধ্যবিত্ত শ্রেণির অর্থনৈতিক মুক্তি নিয়ে আলোচনা করছেন। ট্রাম্পের নজর তখন দেশের ভঙ্গুর অর্থনীতির ওপর। নর্থ ক্যারোলাইনায় সভা করার আগে ভার্জিনাবাসীর উদ্দেশ্যে ট্রাম্প বলেন, দেশে চলমান অর্থনৈতিক বিপর্যয় ও ফেডারেল ঋণের পরিমাণ বাইডেন-কামালা প্রশাসনের ব্যর্থতার চূড়ান্ত উদাহরণ। রিপাবলিকান নেতৃত্ব ছাড়া এ সংকট সমাধান সম্ভব না এমন দাবি তার। তবে, শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প পলিসি নাকি কামালার নিউ ব্লাড- কোন নীতিতে আস্থা রাখতে যাচ্ছেন মার্কিনরা, তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে আর মাত্র ৩ দিন।