অক্টোবরের প্রথম পূর্ণিমা ও অমাবস্যায় সমুদ্র, নদ-নদী হয়ে ওঠে যৌবনা। এটিই ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম। এ সময় সাগর থেকে মিঠাপানিতে চলে আসে ইলিশ। তবে কলাপাড়ার আন্ধারমানিক, রাবনাবাদ নদসহ আশেপাশের নদ-নদীর মুখে কিংবা অভ্যন্তরে ডুবোচরের কারণে সৃষ্টি হয় প্রতিবন্ধকতা।
ডুবোচর ছাড়াও নদ-নদীতে পলিথিনসহ ময়লা-আবর্জনায় নষ্ট হচ্ছে ইলিশের বংশবিস্তারের উপযুক্ত পরিবেশ। এতে ব্যাহত হচ্ছে ইলিশের প্রজনন। ভরা মৌসুমে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ মিলছে না। ইলিশের প্রজনন নির্বিঘ্নে করতে নদীতে পলিথিন ফেলা বন্ধের দবি জেলেদের।
একজন জেলে বলেন, 'আমরা যদি জাল বাইতে যাই, তখন পলিথিন পাওয়া যায়। এই পলিথিনের মধ্যেই অনেক মাছ পাওয়া যায়, ডিম পাওয়া যায়।'
মৎস্য অধিদপ্তরের হিসাব মতে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ইলিশ উৎপাদন হয়েছে ৫ লাখ ১৭ হাজার টন। পরের পাঁচ বছরে উৎপাদন ৫৪ হাজার টন বাড়লেও বাস্তবে নদীর নাব্য সংকট ও দূষণে অর্ধেকে নেমেছে উৎপাদন। উৎপাদন বাড়াতে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি মৎস্য ব্যবসায়ী ও জেলেদের।
একজন জেলে বলেন, 'সরকারের কাছে এখন এটা দাবি যে এটার প্রতি নজর দেয়া ওবং ডুবোচরগুলোকে অপসারণ করা। কারণ এই পলিথিনের কারণেই মাছ কমে গেছে।'
উপজেলা মৎস্য বিভাগ বলছে, দূষণ, ডুবোচর ও নিষিদ্ধ জাল ব্যবহারে ব্যাহত হচ্ছে ইলিশের উৎপাদন। নদ-নদীর উপযুক্ত পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নেয়ার কথা জানান মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা।
পটুয়াখালী কলাপাড়ার মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, 'পুরোপুরি অ্যাক্টিভ রুট বললে আমাদের মেঘনা চ্যানেলটা খুব ভালো অবস্থায় আছে। এছাড়া আমাদের আন্ধারমানিক, রাবনাবাদসহ কিছু কিছু রুটের ক্ষেত্রে অনেক ডুবোচরের কারণে আমাদের ইলিশের মাইগ্রেশনে অনেক সমস্যা হচ্ছে।'
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দূষণ-ডুবোচর, পর্যাপ্ত সবুজ উদ্ভিদ না থাকা, অ্যামোনিয়া গ্যাস, সালফার, হাইড্রোজেন গ্যাসের কারণে ইলিশ উৎপাদন ও বিচরণ কমেছে। জেলেদের বেহুন্দি ও খুটা জাল দিয়ে মাছ শিকারে ইলিশের উৎপাদন কমেছে বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের।
ওয়ার্ল্ড ফিস বাংলাদেশের গবেষণা সহকারি মো. বখতিয়ার রহমান বলেন, 'আন্ধারমানিক বাংলাদেশের অন্যতম একটা অভয়াশ্রম। এর আশেপাশে প্রায় ১ হাজার ২০ মেগাওয়াটের একটি পাওয়ার প্ল্যান্ট তৈরি করা হয়েছে। যার ফলে এই নদীর গভীরতা কমে যাচ্ছে। এবং সেই সাথে স্রোতও হারাচ্ছে। সবকিছু মিলে ইলিশসহ অন্যান্য প্রাণিও হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে।'
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একোয়াকালচার বিভাগের চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, 'কীভাবে আমাদের নদীগুলোকে ড্রেজিং করে ইলিশের যে অভয়াশ্রম রয়েছে সে জায়গাগুলোয় যেন ইলিশ আসতে পারে, নির্বিঘ্নে যেন প্রজনন করতে পারে, ডিম দিতে পারে সেজন্য আমাদের সরকারের দায়িত্ব এই পদক্ষেপগুলো অতিদ্রুত নেয়া।'
রূপালী ইলিশ হচ্ছে গভীর সমুদ্রের মাছ। বংশবিস্তার এবং প্রজননের জন্য উপকূলীয় অঞ্চলের যেসব নদ নদী রয়েছে সে সকল নদনদীর মিঠা পানিতে আসে বংশ বিস্তারে। নদীর মোহনায় ডুব চরের কারণে ইলিশের বিচরণ অনেকটাই কমেছে। একই সঙ্গে পলিথিন, বেহুন্দি জালসহ নদী দূষণের কারণে ইলিশের বিচরণ আগের চেয়ে আশঙ্কাজনক হারে কমেছে। এসকল দখল, দূষণ ও দখল বন্ধ করা হলে বাড়বে ইলিশের উৎপাদন।
মা ইলিশ সংরক্ষণের পাশাপাশি উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে মৎস্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন সব ধরনের মাছ শিকার বন্ধে কঠোর অবস্থানে থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।