এশিয়া
বিদেশে এখন
0

অস্ত্র সমর্পণ করে আলোচনায় বসার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান মিয়ানমারের বিদ্রোহীদের

মিয়ানমারে অস্ত্র সমর্পণ করে আলোচনায় বসতে সেনাবাহিনীর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে বিদ্রোহীরা। অভ্যুত্থানবিরোধীদের লড়াই বন্ধ করে আলোচনার জন্য সামরিক জান্তার হঠাৎ আহ্বানের একদিন পর এ প্রতিক্রিয়া জানায় বিদ্রোহীরা। বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছে, আলোচনা চাইলে আগে সামরিক শাসনের অবসান এবং শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরে সেনাবাহিনীর নিঃশর্ত সম্মতির দাবি বিদ্রোহীদের।

গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাতের পর আড়াই বছরের বেশি সময় কঠোরভাবে অভ্যুত্থানবিরোধীদের দমন করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এ সময়ে পাঁচ হাজার ৭০০ এর বেশি মানুষকে হত্যা এবং এখন পর্যন্ত প্রায় ২১ হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করে রেখেছে সামরিক প্রশাসন- তথ্য, থাইল্যান্ডভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্সের।

তবে দৃশ্য পাল্টাতে শুরু করে গত বছরের অক্টোবরে, যখন দেশের প্রধান সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সংঘবদ্ধ আক্রমণে বিস্তীর্ণ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ হারাতে শুরু করে মিয়ানমার জান্তা। চাপের শুরু তখন থেকেই, বছরব্যাপী অভিযানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সেনাবাহিনীকে কোণঠাসা করে, বিশেষ করে উত্তরপূর্বে চীন সীমান্ত আর পশ্চিমে রাখাইন রাজ্য দখলের পর এখনও দুর্বার গতিতে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে বিদ্রোহীরা।

এমন পরিস্থিতিতেই সেনাবাহিনী পরিচালিত মিয়ানমারের এমআরটিভিতে বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) এক বিবৃতিতে বিদ্রোহীদের আলোচনা বসার আহ্বান জানায় জান্তা। এতে আগামী বছর সম্ভাব্য সাধারণ নির্বাচন সামনে রেখে দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে বিদ্রোহীদের প্রস্তাব দেয়া হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, 'রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লড়াইরত আদিবাসী সশস্ত্র সংগঠন ও পিডিএফ সন্ত্রাসীদের রাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। টেকসই শান্তি ও উন্নয়নের জন্য দলীয় রাজনীতি বা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রাজনৈতিক সংকট সমাধান সম্ভব। দু'পক্ষের হাত মেলানোর জন্য সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের নিজেদের পথ বদলাতে হবে।'

এর আগে বারবার আলোচনার জন্য আন্তর্জাতিক চাপ পর্যন্ত উপেক্ষা করলেও অভ্যুত্থানের সাড়ে তিন বছর পর গৃহযুদ্ধে অচলাবস্থার মধ্যেই হঠাৎ রাজনৈতিক সমঝোতার ডাক সেনাশাসকদের। কিন্তু এই আমন্ত্রণবার্তাতেও বিদ্রোহীদের কার্যক্রমকে সন্ত্রাসবাদ আখ্যা দেয় সেনাবাহিনী, আহ্বান জানায় অস্ত্র সমর্পণের। তাই সামরিক শাসকগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে আলোচনার আহ্বান আপাতদৃষ্টিতে অপ্রত্যাশিত অগ্রগতি বলে মনে হলেও প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানে সময় নেয়নি অভ্যুত্থানবিরোধী কোনো পক্ষই।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ক্ষমতা দখলের পর এবারই প্রথম রাজনৈতিক সংকট রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলায় সরাসরি প্রস্তাব দিয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে নির্বাচিত আইনপ্রণেতা, যারা ২০২১ সালের সেনা অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন, তাদের নিয়ে গঠিত ছায়া সরকার ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট। ক্যারেন আদিবাসী সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্বকারী ক্যারেন ন্যাশনাল ইউনিয়নও প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে। ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকেই মিয়ানমারে বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে লড়াইরত গোষ্ঠীটির মুখপাত্রের অভিযোগ, ৭০ বছরের পুরোনো ধ্যানধারণা নিয়ে আলোচনায় বসতে চাইছে সেনাবাহিনী।

বিদ্রোহীদের এ প্রস্তাব দেয়ার পাঁচ দিন আগেই আগামী বছর সাধারণ নির্বাচনের লক্ষ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদে জাতীয় জনশুমারির কাজ শুরু হয় মিয়ানমারে। দেশজুড়ে যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে নির্বাচন আয়োজন কঠিন এবং অবাধ ও সুষ্ঠু ভোটের সুযোগ নেই উল্লেখ করে সেনাশাসন বিরোধীদের অভিযোগ, সামরিক শাসনকে বৈধতা দেয়া এ নির্বাচনের লক্ষ্য।

গেলো বছরের আগস্টে নির্বাচন দেয়ার কথা থাকলেও এ পর্যন্ত কয়েকবার পিছিয়েছে তারিখ। বর্তমানে একদিকে স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে মিয়ানমারের বড় অংশে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘাত চালিয়ে যাচ্ছে আদিবাসী বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। অন্যদিকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে সামরিক শাসকগোষ্ঠীকে উৎখাতের পর সরকার গঠনের জন্য হাজারও সশস্ত্র গেরিলা সংগঠন গঠন করেছে পিপল'স ডিফেন্স ফোর্সেস।

এসএস