আর কয়েকদিন বাদেই হামাস-ইসরাইল যুদ্ধ পদার্পণ করবে দ্বিতীয় বছরে। এর মধ্যেই লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরাইলের যুদ্ধ পেরিয়েছে এক সপ্তাহ। এদিকে ২০২২ সাল থেকে শুরু হওয়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামার কোনো নামই নেই।
এমন পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে একত্রিত হয়েছেন ১৩০টিরও বেশি দেশের নেতা। ৩য় দিনের উচ্চ পর্যায়ের বিতর্কে অংশ নিয়েছেন ৩৭টি দেশের প্রতিনিধি। যুদ্ধের ভয়াবহতার কথা তুলে প্রত্যেকের কণ্ঠেই ছিল যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান।
৪১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যার পরেও গাজায় আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। বিশ্ব মোড়লদের নীরবতা ক্ষুব্ধ করে তুলছে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্টকেও। তাই জাতিসংঘের মঞ্চে দাঁড়িয়ে গাজায় গণহত্যার জন্য পুরো বিশ্বকেই দায়ী করেন মাহমুদ আব্বাস। জানান, উপত্যকার এক সেন্টিমিটার জমিও ইসরাইলকে নিতে দিবে না ফিলিস্তিনিরা। রেজুলেশন ভঙ্গ করায় ইসরাইলের সদস্যপদ বাতিলের আহ্বান জানান জাতিসংঘের কাছে।
প্রেসিডেন্ট ফিলিস্তিন মাহমুদ আব্বাস বলেন, ‘অবিলম্বে এই অপরাধ বন্ধ করুন। গণহত্যা বন্ধ করুন। ইসরাইলকে অস্ত্র সরবরাহ থেকে সরে আসুন। এমন উন্মত্ততাকে প্রশ্রয় দেয়া যায় না। গণহত্যার জন্য বিশ্ববাসী দায় এড়াতে পারে না। ছোট এই উপত্যকাও দখল করতে চাইছে ইসরাইল। কিন্তু আমরা কাউকে এক সেন্টিমিটার জমিও নিতে দিবো না।’
সাময়িক যুদ্ধবিরতি কার্যকরে হিজবুল্লাহ ও ইসরাইলকে আহ্বান জানিয়েছেন কেইর স্টারমার। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষুধা ও দারিদ্রের বিরুদ্ধে চলা লড়াইকে আটকে দিয়েছে বিশ্বজুড়ে চলা সংঘাত। কূটনীতির মাধ্যমে যুদ্ধ ও সংঘাত নিরসনে যুক্তরাজ্য কাজ করে যাবে বলে অঙ্গীকার করেন তিনি।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমার বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে এখন যে মানবিক সহায়তা প্রয়োজন হচ্ছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এর পেছনে রয়েছে সংঘাত। ২০ বছর ধরে দারিদ্র্য, রোগ ও স্বাস্থ্য খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হলেও বর্তমানে এটি থমকে গেছে যুদ্ধের জন্য। মানুষই যুদ্ধ করে। তাই আমাদের সহযোগিতার ক্ষেত্রও দুর্বল হয়ে যায়। আগ্রাসনের কারণে উত্তর ও দক্ষিণের মধ্যে ব্যবধান বাড়ছেই।’
মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানে নিজেদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন জার্মানি ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবি, ইসরাইলিদের সুরক্ষিত করতে চাইলে নিশ্চিত করতে হবে ফিলিস্তিনিদের সুরক্ষা। অন্যদিকে ইইউ কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট জানান, রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে জোটের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সমর্থন অব্যাহত থাকবে ইউক্রেনের প্রতি।
ইউরোপীয়ান কাউন্সিল প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইউক্রেনকে সমর্থন দিচ্ছে। এবং যতদিন প্রয়োজন এই সমর্থন অব্যাহত থাকবে। স্বাধীনতা ও সংহতি নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি রক্ষার্থে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞা। জাতিসংঘ সনদ অনুযায়ী যুদ্ধকবলিত অঞ্চলে শান্তি ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছি।’
জার্মানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যানালেনা বারবক বলেন, ‘সত্যি বলতে গাজায় শান্তির বিষয়ে অগ্রগতি হতাশাজনক ও কষ্টকর। তবে আমরা হাল ছেড়ে দিচ্ছি না। ইসরাইলি ও ফিলিস্তিনিদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিতে আমরা কাজ চালিয়ে যাবো।’
৬ দিনব্যাপী সাধারণ পরিষদ অধিবেশনের উচ্চ পর্যায়ের বিতর্ক চলবে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।