দুর্নীতি ও অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত শ্রীলঙ্কার সাধারণ মানুষ ২০২২ সালে ৯ জুলাই প্রেসিডেন্ট বাসভবন দখল করে। আরগালয় বা সংগ্রাম নামক এই গণঅভ্যুত্থানের জেরে দেশ ছেড়ে পালান দুই ভাই প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে ও প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দ্রা রাজাপাকসে।
যুগান্তকারী এই অভ্যুত্থানের পর নেতৃত্ববিহীন জাতির দায়িত্ব আসে রনিল বিক্রমাসিংহের কাঁধে। রাষ্ট্র সংস্কার প্রক্রিয়ার মাত্র দুই বছরে মূল্যস্ফীতি ৭০ শতাংশ থেকে নেমেছে শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তিনগুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৫ বিলিয়ন ডলারে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী পাঁচ বছর দেশের হাল ধরবেন কে, তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
আগামী ২১ সেপ্টেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন রেকর্ড ৩৯ প্রার্থী। ইন্সটিটিউট ফর হেলথ পলিসির জনজরিপ বলছে, সর্বোচ্চ ৩৬ শতাংশ সমর্থন রয়েছে অনুরা কুমারা দিশানায়েকের পক্ষে। দেশের সবশেষ পার্লামেন্ট নির্বাচনে মাত্র তিনটি আসন পায় দিশানায়েকের দল জেভিপি। এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বামপন্থী ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) জোটের পক্ষ থেকে লড়ছেন ৫৫ বছর বয়সী এই নেতা। দিশানায়েকের অঙ্গীকার, দুর্নীতির মূলোৎপাটনের মাধ্যমে নির্মাণ করবেন সমৃদ্ধ জাতি, নাগরিকরা পাবে সুন্দর জীবন।
৩২ শতাংশ জনসমর্থন নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে প্রধান বিরোধী দলের নেতা সাজিথ প্রেমাদাসা। এসজিবি দলের প্রধান সমর্থন পেয়েছেন সংখ্যালঘু তামিল ও মুসলিম সম্প্রদায়কে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোর কাছ থেকে। ৫৭ বছর বয়সী সাজিথের অঙ্গীকার, নির্বাচিত হলে উচ্চবিত্তদের দিতে হবে অতিরিক্ত কর। যা দিয়ে উন্নত করা হবে নিম্নবিত্তদের জীবনমান।
বর্তমান প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহের প্রতি সমর্থন ২৮ শতাংশ। ছয় বারের প্রধানমন্ত্রী বিক্রমাসিংহে হাল ধরেন শ্রীলঙ্কার দুঃসময়ে। তবে বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, রাজাপাকসে পরিবারকে রক্ষা, তাদের সংগঠিত হবার সুযোগ দেয়া ও বিচার থেকে নিরাপত্তা দেয়া। ইউএনপি দলের প্রধানের অঙ্গীকার, নির্বাচিত হলে কর হারের পাশাপাশি কমিয়ে আনা হবে জীবনযাত্রার ব্যয়। অন্যদিকে বাড়ানো হবে কর্মসংস্থান।
তবে ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র গঠনের ক্ষেত্রে প্রধান তিন প্রার্থীর কেউই গণঅভ্যুত্থানের চেতনার ধারক নয় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য শ্রমিক শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব গুরুত্বপূর্ণ বলেও মত বিশ্লেষক থেকে শুরু করে কয়েকজন প্রেসিডেন্ট প্রার্থীরও।
শ্রীলঙ্কান অ্যাক্টিভিস্ট মেলানি গুনাতিলাকা বলেন, 'আমার মতে প্রধান তিন প্রার্থীর কেউই আরগালয়ের চেতনা ধারণ করতে পারেনি। তাই গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেয়া অধিকাংশ জনগণ চায়, শ্রমিক শ্রেণির কেউ ক্ষমতায় আসুক।'
পিপলস স্ট্রাগল অ্যালায়েন্সের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী নুয়ান বোপাজ বলেন, 'প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর কেউই আরগালয়ের উদ্দেশ্য পূরণে বদ্ধপরিকর নয়। তাই তাদের মধ্যে যেই জয় পান না কেনো, সমাজে কোনো পরিবর্তন আসবে না। সিস্টেমের পরিবর্তন হবে না। এটি একেবারেই পরিষ্কার।'
তামিল টাইগার বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে চলা ২৬ বছরের গৃহযুদ্ধের অবসান করায় রাজাপাকসে পরিবারকে এখনও নায়কের চোখে দেখেন অনেক সিংহলি। এ সুযোগে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন মাহিন্দা রাজাপাকসের ছেলে নামাল রাজাপাকসে। ২০২২ সালের অর্থনৈতিক দুর্দশার জন্য কোভিড মহামারিকে দায়ী করেছেন ৩৮ বছরের এই রাজনীতিবিদ। এসএলপিপি দলের এই নেতা অঙ্গীকার করেছেন নির্বাচিত হলে কমিয়ে আনা হবে করের বোঝা।
নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য অন্যান্য প্রার্থীর মধ্যে রয়েছেন সাবেক ফিল্ড মার্শাল শরৎ ফনসেকা ও সাবেক বিচারমন্ত্রী উইজেয়াদাসা রাজাপাকসে।