নির্বাচন কমিশন নিয়োগে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের নীতি সংলাপ। যোগ দিয়েছেন বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় নাগরিক কমিটিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। প্রায় ৪ ঘণ্টা ধরে চলা এই সংলাপে নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে উঠে আসে নানা আলোচনা।
নির্বাচন ব্যবস্থার সাথে জনগণকে সম্পৃক্ত করার দাবি জাতীয় নাগরিক কমিটির। বিশেষ করে যাদের মাধ্যমে ৫ই আগস্টের বিপ্লব অর্জিত হয়েছে, সেই ছাত্র জনতাকে নিয়ে আলোচনা করার পরামর্শ তাদের।
জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য নাহিদা সারোয়ার বলেন, ‘আমরা যেন জনতাকে সবসময় মনে রাখি। আমরা যেন পথকে ভুলে না যাই। আমরা যে নির্বাচন নিয়ে এখানে আলোচনা করতে পারছি, আমাদের অধিকাংশেরই এখন এখানে বসে থাকার কথা না। যদি ৫ আগস্ট না আসতো আমরা জানিনা কে কোন আয়নাঘরে থাকতাম।’
নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা ইসি নিয়োগের বিদ্যমান আইনের কঠোর সমালোচনা করেন। তারা বলছেন, এই আইন বাতিল করে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে। এসময় দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিরোধিতা করেন তারা।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার ইকতেদার আহমেদ বলেন, ‘আমাদের সংবিধান অনুযায়ী আপিল বিভাগ বা হাইকোর্টের কোনো বিচারককে সার্চ কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ নেই।’
নুরুল হক নুর বলেন, সার্চ কমিটিতে আমার ও দলের দৃষ্টিতে পাঁচ থেকে সাতজনের একটি প্রতিনিধি দল থাকতে পারে। এদের মধ্যে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা থাকতে পারেন। কারণ তারা কর্মকাণ্ড দেখে বিচার করা যায়।
সংলাপে অংশ নিয়ে বিএনপি নেতারা বলে, রাজনৈতিক দলগুলো না চাইলে ভালো নির্বাচন সম্ভব না। অন্যদিকে জামায়াতের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিচারবিভাগকে কোনোভাবেই জনসম্পৃক্ত বিষয়ে যুক্ত করা উচিত হবে না। সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজ এবং ছাত্র জনতার সার্চ কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেয় জামায়াত।
নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন ত্রুটিপূর্ণ ও অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেন ইসি সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার। বলেন, সদ্য পদত্যাগ করা নির্বাচন কমিশনরা পক্ষপাতদুষ্ট ছিলেন। তারা সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমাদের সংবিধানের মৌলিক কাঠামো হলো গণতন্ত্র। যে নির্বাচন সংবিধানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে সে নির্বাচন সংবিধান সম্মত নয়। তারা সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখওয়াত হোসেন বলেন, ভালো নির্বাচনের জন্য অবশ্যই নিরপেক্ষ সরকার প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ‘ইলেকশন কমিশন ইজ পিওরলি অ্যান্ড পিওরলি এ সিরিয়াস অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ম্যাটার। এটা শুধু বাংলাদেশেই নয়, সমগ্র বিশ্বে। কারণ আপনি অ্যাডমিনিস্ট্রেটরদের দিয়ে নির্বাচন করাচ্ছেন।’
সংলাপে অংশ নিয়ে বিভিন্ন বক্তারা নির্বাচন ব্যবস্থার আমুল সংস্কারের পাশাপাশি সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের সংসদ কিংবা সরকার গঠনের পরামর্শ দিয়েছেন।