দেশে এখন
0

অনলাইনে ইলিশ বিক্রি, প্রতারক চক্রের ফাঁদে ক্ষতির মুখে সম্ভাবনাময়ী খাত

স্বাদে অতুলনীয় দূরদূরান্ত থেকে যারা চাঁদপুরের তাজা ইলিশ খেতে চান, তাদের কাছে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে অনলাইনে ইলিশ বিক্রি। এতে করে এক দিকে তাজা ইলিশের স্বাদ নিতে পারছেন দেশের সব অঞ্চলের মানুষ, পাশাপাশি সৃষ্টি হচ্ছে অসংখ্য বেকার যুবক-যুবতীর কর্মসংস্থান। তবে উদ্যোক্তারা বলছেন, অনলাইনে সক্রিয় প্রতারক চক্রের তৎপরতায় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে সম্ভাবনাময় এই খাত। অনলাইনে কেনাকাটায় ক্রেতাদের আরও সচেতন হওয়ার আহ্বান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর।

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার মুকিমাবাদের রেশমা আক্তার বাজারে খুব একটা যান না। সন্তানদের ইলিশ খাওয়ার আবদার পূরণের জন্য বাজারবিমুখ রেশমার ভরসা অনলাইন কেনাকাটা। তাই মুঠোফোনের মাধ্যমে দরদাম করে অনলাইনে অর্ডার করেন ইলিশ মাছ। বাজারে না গিয়েও তাজা ইলিশ বাসায় পৌঁছে যাওয়ায় খুশি তিনি।

রেশমা আক্তার বলেন, 'আমি মাছটা ভালো পেয়েছি। আমার সময় বেঁচে গেছে। আমার বাজারে গিয়ে ভিড়ের ভেতর হাঁটাহাঁটি করে মাছ কিনতে হচ্ছে না। আমি অনলাইনে অর্ডার করে দরজায় জিনিস পেয়ে যাচ্ছি। আমার সময় এবং বাজারের গ্যাঞ্জাম দুইটা থেকেই আমি মুক্ত।'

তাজা ইলিশ কিনতে প্রতি মৌসুমে চাঁদপুরে আসেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ। আর যাদের আসার সুযোগ নেই, তাদের ভরসা হয়ে উঠেছে একদল তরুণ উদ্যোক্তা। তাদেরই একজন চাঁদপুর শহরের বাসিন্দা সজীব চন্দ্র দাস। ২০১৪ সালে চাঁদপুর মৎস্য ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট থেকে পড়াশুনো শেষ করে স্থায়ী কোনো চাকরি না পেয়ে ২০২০ সালে যুক্ত হন অনলাইনে ইলিশ বিক্রি কার্যক্রমে। নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পেইজ খুলে শুরু করেন বেচাবিক্রি। বর্তমানে প্রতি মৌসুমে প্রায় কোটি টাকার ইলিশ বিক্রি করেন তিনি।

সজীব চন্দ্র দাস বলেন, 'যেহেতু আমার মাছ নিয়ে পড়াশোনার জ্ঞান আছে, সেটা কাজে লাগিয়ে ২০২০ সালে অনলাইনে মাছ বিক্রি শুরু করি। আমি দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছর যাবৎ এই কাজ করছি।'

সজীব দাসের মতো অনেকেই অনলাইনে ইলিশ বিক্রি মাধ্যমে নিজেদের বেকারত্ব ঘোচাচ্ছেন। তবে অনলাইনে ইলিশ কিনতে গিয়ে চটকদার বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পড়ে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন কেউ কেউ। এতে করে বিপাকে পড়ছে প্রকৃত অনলাইন ইলিশ ব্যবসায়ীরা। সম্ভাবনাময় এই মাধ্যমের উদ্যোক্তাদের টিকিয়ে রাখতে প্রতারক চক্রকে আইনের আওতায় আনার কথা বলছেন মৎস্য ব্যবসায়ীরা।

একজন উদ্যোক্তা বলেন, 'সারাদেশের অনেক জায়গায় ইলিশ পায় না মানুষ। কারণ সেখানে ইলিশ যায়নি। এখন অনলাইনের কারণে সেখানে যাচ্ছে। আমরা পড়াশোনার পাশাপাশি এটা করতে পারছি। এটা একটা বাড়তি ইনকাম। ইলিশ ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা কেজি। কিন্তু অনেকসময় অনলাইনে দেখা যায় ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হচ্ছে। এগুলা আমাদের নামে ভুয়া পেজ খুলে করা হচ্ছে। অনেকেই এই প্রতারণার শিকার হচ্ছে। তাদের টার্গেট হচ্ছে দিন যদি ১০০ মানুষ থেকে ৫০০ টাকা করে হাতিয়ে নিতে পারে, তাহলে তাদের ভালো টাকা হবে। এটাই তাদের ব্যবসা।'

চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুল বারী মানিক জমাদার বলেন, 'অনলাইন ব্যবসার প্রসারণের কারণে অনেক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। অনেক বেকার যুবক এখন কাজ করছে। সেক্ষেত্রে আমাদের একটা সুবিধাও হয়েছে। সেটা হলো ইলিশ মাছের মার্কেটিং অনেক বেশি হয়েছে। আবার অনলাইন ব্যবসা কেন্দ্র করে একটা সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র চাঁদপুরের নাম দিয়ে ভোক্তা সাধারণের সাথে প্রতারণা করছে।'

পুলিশ জানায়, ইলিশ বিক্রির মাধ্যমে যারা প্রতারণা করছে তাদের আইনের আওতায় আনতে কাজ চলছে। পাশাপাশি অনলাইনে কেনাকাটায় ক্রেতাদের আরো সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান পুলিশের কর্মকর্তা।

চাঁদপুর রিভার পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শ্রীমা চাকমা বলেন, 'চাঁদপুরের ভেতরে এমন কাউকে পাইনি যারা ইলিশ নিয়ে প্রতারণা করছেন। বেশিরভাগ হচ্ছে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় বসে তারা এই প্রতারণাটা করছেন। তারপরও ভুক্তভোগী কেউ থাকলে আমাদের কাছে আসেন, আমরা অবশ্যই তাকে প্রকৃত আইনগত সহায়তা সেবা দেয়ার চেষ্টা করবো।'

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিগত সময়ের চেয়ে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় কমেছে ইলিশের আহরণ এতে বাড়ছে ইলিশের দাম। যার প্রভাব পড়ছে ব্যবসা-বাণিজ্যে।

এসএস