ঋতুচক্রে প্রমত্যা পদ্মা পাল্টে ফেলেছে রূপ। শান্ত লাশ্যময় থেকে উত্তাল তরঙ্গে দুরন্ত হয়ে উঠছে প্রতিনিয়ত।
উজান থেকে ভাটির পথে বহমান ধারায় ক্রমেই ফুলে-ফেপে উঠে এগিয়ে আসছে শহর ও লোকালয়ের কাছে। ইতো মধ্যে রাজশাহী প্রান্তের ২৭ কিলোমিটার জুড়ে মাঝ নদীতে জেগে ওঠা চারশত হেক্টর খন্ড খন্ড বালুচর ডুবিয়েছে পদ্মা। তাতে গরু-মহিষের বাথান নিয়ে ভাটিতে উঠেছে রাখাল-গোয়ালের দল। আর নদীর পানি বৃদ্ধিতে শহর প্রান্তে ১১ কিলোমিটার বাঁধের ধারে বসবাসরত প্রান্তিক মানুষেরা আছেন নানা অতঙ্কে।
শহর প্রান্তে বাঁধের ধারের বাসিন্দাদের একজন বলেন, ‘পানি বাড়ছে যার ফলে ভাঙন শুরু হয়েছে।’
শহর প্রান্তের ২৭ কিলোমিটার নদীর ১৮ কিলোমিটারেই আছে ব্লকে বাঁধানো বাঁধ। শহরের পূর্ব এবং পশ্চিম প্রান্তের পবা উপজেলার বেড়পাড়া, গহমাবুনা, নীলবুনা এবং চারঘাটের পিরোজপুর, চন্দন শহর এবং গোপালপু গ্রামে বাঁধের বাকিটুকু মাটির। এতে ফাঁরাক্কাবাঁধের ১০৯টি জলকপাট খোলার খবরে নদীর পানি বৃদ্ধিতে ভাঙন আর গ্রামে পানি ওঠা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় আছেন গ্রামবাসীরা।
গ্রামের বাসিন্দাদের একজন বলেন, ‘এই জায়গাটা ভাঙতে ভাঙতে বাড়ির কাছে চলে এসেছে।’
পানি বৃদ্ধিতে বিচিত্ররূপ দেখাচ্ছে পদ্মা। রাজশাহীতে গেল ২৩ আগষ্ট থেকে বাড়ছে পানির স্থর। এক সপ্তাহের ব্যবধানে শহরের বোয়ালিয়া পয়েন্টে পানি বেড়েছে ১৩ সেন্টিমিটার। আর ভারত থেকে বাংলাদেশে পদ্মার প্রবেশ স্থান চাঁপাইনবাবগঞ্জের শীবগঞ্জ উপজেলার চরপাঁকা এলাকায় একই সময়ে পানি বেড়েছে ১৯ সেন্টিমিটার।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে নদীর এমন পানি বৃদ্ধিতেই চাঁপাইনবাবগঞ্জের শীবগঞ্জ উপজেলার বোগলাতলা গ্রামে ভাঙনের তান্ডব শুরু করেছে পদ্মা। গেল কয়েক দিনে ৫ থেকে ১০টি ভিটাবাড়ি বিলীন হয়েছে পদ্মার বুকে। নদী তীরে ২০ থেকে ২৫ বাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন গ্রামবাসিরা।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলছেন, যে কোন প্রয়োজনে তাদের সহায়তায় কাজ করছেন তারা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আফতাবুজ্জামান আল-ইমরান বলেন, 'বর্তমানে ফারাক্কার প্রভাবে বন্যার যে তথ্য আসছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা সত্য নয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিগত বছরগুলোর মতোই নদীর পানি বৃদ্ধিতে ভাঙনের কবলে পড়েছে এসব গ্রাম।'
পদ্মার পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে নদীতীরে কৃষকের লাগানো বাদাম ও আগাম শীতকালীন সবজি ভেসে যাবার শঙ্কায় আছে কয়েক গ্রামের মানুষ। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, বাঁধের ভাঙন রোধে জরুরি ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত রয়েছেন তারা। এছাড়া নিয়মিত মনিটরিং করছেন তারা।
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুর রহমান অঙ্কুর বলেন, 'বাঁধের ভাঙন রোধে জরুরি পানি মাপার স্টেশন ও যৌথ নদী কমিশন ফারাক্কা বাঁধের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।'
এছাড়া এই নির্বাহী প্রকৌশলী আরও বলেন, নদী ভাঙন হলেও তার ফলে রাজশাহীর কোথাও বন্যা হবার শঙ্কা নেই। সর্বশেষ এ অঞ্চলে ১৯৯৮ সালে রাজশাহী প্রান্তে পদ্মা নদীর ১৮ দশমিক ০৫ মিটার বিপদসীমা অতিক্রম করেছিলো পদ্মা।