দেশে এখন
0

এক ই-মেইলের খেসারতে ৯৪ দিন আয়নাঘরে রাখা হয় শাহিনকে

এখনও দগদগে ঘা স্মৃতিতে। ৯৪ দিনের আয়নাঘরের সেই স্মৃতি কিছুতেই ভুলতে পারছেন না প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ আতাউর রহমান শাহিন। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের একটি ই-মেইলকে কেন্দ্র করে ২০১৯ সালে গুলশান লিংক রোড থেকে তুলে নেয়া হয়েছিল শাহিনকে। পরে ছাড়া পেলেও আয়নাঘরের নির্যাতনের ভয় ও হত্যার হুমকিতে ৫ বছরেও স্ত্রীকে কিছুই জানাননি সেই ভয়াল ৯৪ দিনের ঘটনার বিবরণী।

রাস্তায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা উবারের জন্য। হুট করে সাদা একটি মাইক্রোবাস এসে থামলো সামনে। পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা দুইজনের ধাক্কায় মাইক্রোবাসের ভেতরে শাহিন। এক টানে গুলশানের লিংক রোড থেকে লাপাত্তা মাইক্রোবাস। সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পরা এই দৃশ্য দেখে মনে হতে পারে কোন কিডন্যাপার দলের কাজ এটি।

অবশ্য এই দৃশ্যের সাথে মিল রেখে ২ লাখ টাকা দাবি করেছিলেন একজন। কিছুটা দেন দরবারের পর আত্মীয়ের বাসা থেকে সন্তান সম্ভবা স্ত্রী তানিয়া আক্তার ধার করে দিয়েছিলেন ১ লাখ টাকা। তবুও ঘরে ফিরে আসেনি শাহিন। ফোন বন্ধ ১০ মিনিটের মাথায়। কোথায় গেলে মিলবে সমাধান? পুলিশ, র‌্যাব, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্পিকার, মাথা ঠুকেছেন সব দরজায়।

শাহিনের স্ত্রী তানিয়া আক্তার বলেন, ‘দুপুর বেলা দুইটার সময় জুমার নামাজের পরে আমার কাছে কল আসলো। সেখানে ২ লাখ টাকা দাবি করলেও দেন দরবারের পর ধার করে ১ লাখ টাকা তাদেরকে দেয়া হয়। এরপর সব ফোন। এরপর সরকারের সকল পর্যায়ে কথা বললেও কোনো সমাধান হয়নি।’

৯৪ দিন পর একটি সিএনজি নিয়ে বাড়ি ফিরেছে শাহিন। কি ঘটেছিলো তার সাথে? কোথায় ছিলেন তিনি? ভয়ে কিছুই বলছে না কারো কাছে।

এরপর কেটেছে ৫ বছরের বেশি সময়। পরিবর্তন হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। সাহস মিলেছে মুখ খোলার। কি হয়েছিলো সেদিন?

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক আইটি পরামর্শক আতাউর রহমান মন্ডল (শাহিন) বলেন, ‘হঠাৎ একটা সাদা মাইক্রোবাস আমার সামনে এসে দাঁড়ায় এবং পিছন থেকে ধাক্কা দিয়ে গাড়ি ভিতর নিয়ে কালো মাস্ক পড়িয়ে ফেলে।  ঠিক কী কারণে আমাকে নেয়া হয়েছে সেটা এখনো জানি না। পরে জানানো হয় মেইলের ঝামেলা হয় কার্যালয়ে।’

আয়নাঘরে আয়না নেই, আছে বিভৎস যন্ত্রণার স্মৃতি। দৈর্ঘ্যে ৭ ফিট আর প্রস্থ্যে ৪ ফিটের একটি রুমে কেটেছে ৩ মাসের বেশি সময়।

শাহিন বলেন, ‘দরজার দুই পাশে ছিলে দুইটা ফ্যান ছিল তবে সেটাতে কোনো বাতাস হতো না। এই ফ্যান চালালে বাহিরে কি হচ্ছে শব্দ বোঝার মতো অবস্থা নেই। রুমের উপরে লাইট যেটা আছে সেটা অনেক ভোল্টেজের। মনে হয় চোখ বন্ধ করলেও আলো চোখে চলে আসে।

নিজ রুমের দেয়ালে ছিল রক্তের ছোঁপ ছোঁপ দাগ। পাশের রুম গুলোতে প্রায় প্রতি রাতেই শুনতেন আর্তনাদের শব্দ।

আয়নাঘর থেকে ফিরেই হারিয়েছেন চাকরি। নিষেধ ছিল নতুন চাকুরিতে যোগ নিয়েও। ভয়ের রাজ্য পার করে আসা এই ব্যক্তি কি কোনদিনো বিচার পাবেন এটাই এখন বড় প্রশ্ন?

tech