দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ট্রাকে করে নিয়ে আসা ধান নামাতে ব্যস্ত শ্রমিকরা। কারখানার ভেতরে কারিগরদের কর্মযজ্ঞ। নেই দম ফেলার ফুরসত। স্বয়ংক্রিয় মেশিনে ধান থেকে তৈরি হয় চিড়া।
দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বন্যার কারণে হঠাৎ বেড়েছে শুকনো খাবারের চাহিদা। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ দিতে হিমশিম অবস্থা চিড়া তৈরির কারিগরদের।
কারখানার এক শ্রমিক জানান, এলাকার যুব সমাজ, ছাত্র থেকে শুরু করে সেনাবাহিনীে এসে চিড়া নিয়ে যাচ্ছে। বাইরে পাইকারি পর্যায়ে কোনো চিড়া বেচা-কেনা হয়না। আরেক শ্রমিক জানান, অনেক ক্রেতা এসে ফেরত যাচ্ছেন। প্রয়োজন বা চাহিদা অনুযায়ী চিড়া সরবরাহ করা যাচ্ছে না।
বিভিন্ন বাজার ঘুরে চিড়া না পেয়ে অনেক ক্রেতা সরাসরি মিল থেকেই চিড়া সংগ্রহ করছেন। অতিরিক্ত চাহিদার কারণে অগ্রিম অর্ডার দিতে হচ্ছে বলে জানান ক্রেতারা।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যায় যখন লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছে তখন শুকনো খাবার চিড়ার দাম বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে।
গাজীপুরের চিড়া মিলগুলোতে মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি ৫০ কেজির বস্তায় চিড়ার দাম বেড়েছে ৭৫০ টাকা। বাজারগুলো তা আরও কয়েকগুণ বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।
মাত্র এক সপ্তাহ আগে কারখানায় প্রতি কেজি চিড়া ৫৫ টাকায় বিক্রি হলেও ১৫ টাকা বেড়ে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। চিড়ামিল মালিকদের দাবি, ধানের দাম বৃদ্ধি, অতিরিক্ত শ্রমিক ও তাদের বাড়তি মজুরির কারণে চিড়ার দাম বেড়েছে।
গাজীপুরের মিতালি চিড়া কলের স্বত্বাধিকারী নুরুল করিম পারভেজ বলেন, ‘যেখানে বন্যার আগে ধানের মন ছিল এগারশ থেকে এগারশ পঞ্চাশ টাকা, বন্যার কারণে এখন তা ২০০ টাকা বেড়ে তেরোশ থেকে সাড়ে তেরোশ টাকা হয়েছে।’
অন্যদিকে, মিল থেকে বের হয়ে হাটবাজারে ঢুকলেই ৭০ টাকার চিড়ি হয়ে যাচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি। স্থানীয় দোকানগুলোতে চিড়ার সংকটের কারণে বাড়তি দরেই কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। এতে ক্ষুব্ধ ভোক্তারা।
এক ভোক্তা জানান, গাড়ি থেকে বস্তায় চিড়া নামছে, কিন্তু দোকানদার বলছে চিড়া বিক্রি হয়ে গেছে। আরেক ভোক্তা জানান, মিলে চিড়ার দাম ৬২ টাকা কেজি। কিন্তু বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা কেজি দরে।
ব্যবসায়ীদের দাবি, কারখানা থেকে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ মিলছে না। আবার দামও দিতে হচ্ছে বেশি। এ কারণে তাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
বন্যায় ত্রাণ সহায়তাকারীদের অভিযোগ, সংকটকালীন সময়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বাড়তি মুনাফার আশায় চিড়ার কৃত্তিম সংকট তৈরি করছে। সুযোগ বুঝে বাড়িয়ে দিচ্ছে দাম। বিষয়টি আমলে নিয়ে বাজার মনিটরিংয়ের দাবি জানিয়েছেন সাধারণ মানুষও।