যতদূর চোখ যায় শুধুই অথৈ পানি। তলিয়ে গেছে বাড়ি-ঘর, ফসলি জমি। ভেসে গেছে গৃহপালিত ও খামারের পশু, হাঁস-মুরগি ও পুকুরের মাছ। সব হারিয়ে ভেঙেছে কৃষকের স্বপ্ন। দুশ্চিন্তায় কুমিল্লার ১৪টি উপজেলার হাজারো কৃষক।
শুক্রবার (২৩ আগস্ট) ভোর থেকে প্লাবিত হতে শুরু করে নতুন নতুন এলাকা। গৃহপালিত হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশু নিয়ে উঁচু স্থানে আশ্রয়ে নেন স্থানীয়রা। তবে গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন খামারিরা।
এক খামারি জানান, বাড়িতে চারটা গরু ছিল। দুটি গরু এসেছে, বাকি দুটি ভেসে গেছে। আরেক খামারি জানান, আমার ব্রয়লার মুরগী ছিল। দুই খামারের মধ্যে একটা ডুবে গেছে। কোনোরকম মুরগী বাঁচিয়েছি। আরেকটা খামারও ডুবে যাচ্ছে।
চাষিরা জানান, বন্যায় ভেসে গেছে কয়েকশ' ঘেরের মাছ। নষ্ট হয়েছে শত শত হেক্টর জমির পাকা আউশ ধান। তলিয়ে গেছে আমনের বীজতলা এবং শাকসবজিসহ অন্যান্য ফসলের ক্ষেত। সবকিছু হারিয়ে প্রায় নিঃস্ব বন্যা দুর্গত এলাকা চাষিরা।
মাছের খামার করা একজন জানান, দুই-তিন লাখ পুঁজি ছিল আমার। মাছের খামার তলিয়ে গেছে। সম্পূর্ণ মাছ নদীতে তলিয়ে গেছে। আরেক কৃষক জানান, পুরো জমি তলিয়ে গেছে। জমি পড়ে পাওয়া গেলেও বীজ আর পাওয়া যাবে না।
জেলা কৃষি বিভাগ বলছে, ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে চাষিদের সহযোগিতা করার ব্যাপারে কি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সে ব্যাপারে আলোচনা চলছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আইউব মাহমুদ বলেন, কৃষক পর্যায়ে কোনো বীজ সংরক্ষিত আছে কি না সে তথ্য আমরা নেয়ার চেষ্টা করছি। যদি থাকে তাহলে সেগুলো কৃষকদের মধ্যে বিনিময় করার চেষ্টা করবো। অথবা সরকারি কোনো ফান্ড পেলে বীজ কিনে চারা করে বা যেভাবেই হোক কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করারে চেষ্টা করবো।’
জেলা প্রশাসক জানান, ৭২৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। এখন পর্যন্ত ৩০০ টন চাল এবং ১৫ লাখ টাকা বন্যার্তদের বিতরণ করেছে প্রশাসন।
কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পঙ্কজ বড়ুয়া বলেন, ‘আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতের শুকনো খাবারের পাশাপাশি পর্যাপ্ত খাবারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বন্যার সময় পানি বিশুদ্ধকরণের জন্য ১৭টি উপজেলায় ২ লাখের বেশি ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে।’
এদিকে কুমিল্লায় পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। বন্ধ রয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। ঘটছে প্রাণহানির ঘটনাও।