আইরিশ মেহজাবিন রাফা। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী। নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর তার ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন হয়েছে চারটি বিষয়ের ওপর। বাকি এখনো ৬টিই। কোটা সংস্কার ও ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঘিরে এক মাস বন্ধ স্কুলে পরীক্ষা, পড়াশোনা। এ অবস্থায় বাড়িতে অলস সময় পার করছে সে।
রাফা বলেন, ‘তেমন পড়তে হচ্ছে না শুধু টপিকগুলো নিয়ে আইডিয়া নিচ্ছি।’
তবে রাফার মায়ের অভিযোগ, নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর যে পদ্ধতিতে হয়েছে মূল্যায়ন, তাতে সন্তান কেবল পড়াশোনা থেকে বিমুখই হয়েছে।
রাফার মা বলেন, ‘বাচ্চারা এখন ডিভাইসমুখী হয়ে আছে। বই বিমুখ হয়ে যাচ্ছে সবাই। যত দ্রুত সম্ভব বইয়ের দিকে ফিরিয়ে আনা।’
সার্বিক পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় দীর্ঘদিন বন্ধ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এরপর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের দিন আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৬ আগস্ট থেকে খোলা রাখার নির্দেশনা দেয়ার পরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হলেও শিক্ষার্থীর উপস্থিতি নেই। কেবল অফিস করছেন শিক্ষকরা। অন্যদিকে ঢাকার বাইরে অনেক জেলায় স্কুলে ক্লাস চললেও উপস্থিতি কম।
আজিমপুর গভ. গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক গীতাঞ্জলি বড়ুয়া বলেন, 'এই সরকারি স্কুলে প্রায় ৩ হাজারের মতো শিক্ষার্থী রয়েছে। তবে এখনো আগের মতো শিক্ষার্থী আসা শুরু করেনি। পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত আমরা এইটা বলতে পারছি না।'
কবে পুরোদমে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে মাধ্যমিকে? ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের কী হবে? এসব প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে শিক্ষার্থীদের মাথায়।
একজন শিক্ষার্থী বলেন, 'আন্দোলনের কারণে আমাদের পরিক্ষা স্থগিত হয়েছিল তবে এখনো নিশ্চিত না যে আমাদের পরিক্ষা কবে শুরু হবে।'
এ বছর সারাদেশে একযোগে কেন্দ্রীয়ভাবে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের প্রশ্ন প্রণয়ন করছে। সংস্থাটি এ মুহূর্তে নিজেও জানে না স্থগিত থাকা বিষয়গুলোর মূল্যায়ন আবার কবে নেয়া হবে। কথা বলতে রাজি হননি সংশ্লিষ্ট কেউই।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম পুরোদমে চালুর পরিবেশ তৈরি করা এখন জরুরি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইআরয়ের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান বলেন, 'আমাদের অতি দ্রুত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে। খোলার জন্য আমাদের প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত একটা কমিশন গঠন করা দরকার তাদের দেয়া রুপরেখা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা যেতে পারে।'
একই সঙ্গে ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দিতে হবে। কেন্দ্রীয়ভাবে নয়, এই মূল্যায়ন বিদ্যালয় ভিত্তিক করার পরামর্শ এই শিক্ষাবিদের।