আন্দোলনের স্মৃতি ধরে রাখতে রাজশাহীজুড়ে আঁকিবুকি

0

পরিচ্ছন্ন-পরিপাটি সবুজ নগর রাজশাহীর ক্ষতচিহ্ন সারাতে এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে স্মরণে রাখতে নগরজুড়ে চলছে গ্রাফিতির আঁকিবুকি। নগরের বিভিন্ন প্রান্তে গ্রাফিতি আকঁতে নেমেছেন তিনশ'র বেশি আঁকিয়ে। সার্কিট হাউস রোডের দীর্ঘ দেয়ালজুড়ে আঁকা হয়েছে নতুন বাংলাদেশের গল্প।

স্বপ্নের বুননে দেয়াল ছুঁয়ে চলে তুলির আঁচড়। লাল-সবুজের চেনা রং রূপ নেয় নতুন আদলে, ফুটে ওঠে স্বাধীনতার গল্প। সবুজ জুড়ে সংখ্যার ১, আনমনেই যেন এক করে মানচিত্রের পাহাড়, সমতল, নদী ও সমুদ্র তটের উত্তাল এক দাবিকে। তরুণ-যুবারা দেয়ালে ফুটে তোলেন বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশের গল্প।

গেল ৫ আগস্টের পর কেউ কাঁধে তুলে নিয়েছেন সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর দায়িত্ব, কেউ ব্যস্ত রাষ্ট্রের লুট হওয়া মালামাল উদ্ধারে। নানা কাজের ফাঁকে তাদেরই কেউ কেউ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিচিত্র আঁকছেন নগরীর বিভিন্ন মোড়ের দেয়ালে।

একজন শিক্ষার্থী বলেন, 'যদি আমরা গ্রাফিতি করি তাহলে দেয়ালগুলো দেখতে আরও সুন্দর লাগবে। সেজন্য আমরা দল করে কাজটা করছি। আমাদের মেইন থিম হচ্ছে আন্দোলনের শুরু থেকে যে প্রোটেস্টগুলো হয়েছে সেগুলো ফুটিয়ে তোলা।'

সবুজ সুন্দর পরিপাটি নগরে নিপীড়নের কুৎসিত ক্ষত ঢেকে দেয়ালে এঁকে দিচ্ছেন, উন্নয়ন, ন্যায়, আর সাম্যের ছবি। সেখানে ফুটে উঠছে শেকল ভাঙা ফিনিক্সের গল্প। আন্দোলনের নানা স্লোগান আর তরুণদের সংগ্রামের বিভিন্ন সময়ের রূপ।

আঁকিয়ে একজন বলেন, 'আমরা সবাই একত্রিত হয়েছি কারণ আমাদের এই যে আত্মত্যাগ, সেটা সবার সামনে তুলে ধরার জন্য। স্মৃতিতে মনে রাখার জন্য আমাদের এমন উদ্যোগ। আমাদের এই আন্দোলনের সময় আমাদের যে কষ্ট, আমরা এই দেয়ালগুলোতে সেই চিত্রও ফুটিয়ে তুলেছি।'

প্রায় আধা কিলোমিটার জুড়ে দেয়ালে আঁকা এই গ্রাফিতি রাজশাহীতেও প্রথমবার হচ্ছে। তাতে আঁকতে বসা এসব হাতের দু'একটি বাদে সকলেই অপেশাদার। তাই তাদের দাবির কথা ছবির মধ্যদিয়ে ফুঁটিয়ে তুলতে সহযোগিতায় উৎসাহ দিতে দেখা যায় পেশাদার চিত্রশিল্পীদের।

একজন চিত্রশিল্পী বলেন, 'সবকিছু তারা নিজেদের হাতে তুলে ধরছেন। এটাও কিন্তু একধরনের প্রতিবাদ। চিত্রকর্ম অনেক মক্তিশালী একটা ভাষা। এটা বোঝার জন্য কাউকে নির্দিষ্ট কোনো ভাষা বুঝতে হবে এমন না। চিত্রকর্ম দেখে ছোট থেকে বৃদ্ধ সবাই বুঝতে পারে যে তাতে কী বলা হয়েছে।'

ছবির মাধ্যমে জুলাইকে স্মরণ রাখতে কোনো সহযোগিতা ছাড়াই এ উদ্যোগ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়কদের। তবে সহযোগিতা পেলে শহর জুড়ে আরও কাজের আশা প্রকাশ করেন তারা।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সমন্বয়ক মো. আবুল বাশার বলেন, 'এরপর এটার থেকেও বড় কিছু যেন করা যায় সেটা নিয়ে আমরা প্ল্যান করছি। এ সবগুলো আমরা নিজেদের উদ্যোগে করছি। আমরা ভালো কোনো সহযোগিতা পেলে চেষ্টা করবো পুরো রাজশাহীজুড়েই এই কাজগুলো করার।'

রাজশাহী নগরজুড়ে এমন অর্ধশতাধিক স্থানে গ্রাফিতি অঙ্কনে অংশ নেন চারুকলা, আর্ট কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী কলেজসহ শতাধিক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।

tech