টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জে সপ্তাহ খানেকের ব্যবধানে তিন দফা বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এতে সাত উপজেলার সাড়ে ৬ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। ডুবে যায় রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, ফসলি জমি থেকে শুরু করে সবকিছুই। তিন দফা এই বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় কৃষিখাত।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের মুসলিমপুর গ্রামের কৃষক চাঁন মিয়া ধারদেনা করে চার একর জমির মধ্যে আউশ ধান ও দেড় একর জমিতে করেছিলেন সবজি চাষ। হঠাৎ পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে যায় তার ফসলি জমি ও ঘরবাড়ি। প্রাণ বাঁচাতে পরিবার নিয়ে ছোটেন আশ্রয়কেন্দ্রে। পানি কমার পর বাড়ি ফিরে দেখেন পচে নষ্ট হয়ে গেছে ফসল।
চাঁন মিয়া বলেন, 'হঠাৎ পানি এসে আমার বাড়ি ঘর সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। শুধু ঘর বাড়িই না, জমিতে যে ফসল করেছিলাম, সেগুলো সব ডুবে নষ্ট হইছে।'
শুধু চাঁন মিয়াই নয়, তিন দফা এই বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জেলার ১০ হাজারেরও বেশি কৃষক। এমন পরিস্থিতিতে কৃষির প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছেন অনেকে। সরকারি সহায়তা না পেলে ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন হবে বলে জানান কৃষকরা।
একজন কৃষক বলেন, 'ধান, সবজি যেটাই করেছি সব পচে গেছে। গত দুই বছরে আমার সব ফসল বন্যার পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। এতে করে আমি সাত থেকে আট লাখ টাকা ঋণী আছি।'
সুনামগঞ্জে চলতি মৌসুমে বন্যায় প্রায় দুই হাজার হেক্টর আউশ ধান ও ৭০০ হেক্টর সবজির জমি তলিয়ে গেছে। স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তা জানালেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনা দিতে চলছে তালিকা তৈরির কাজ ।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, 'তিন দফা বন্যায় সুনামগঞ্জে প্রাং ১২ কোটি টাকার আউশ ধান আর প্রায় ৩০ কোটি টাকার সবজি নষ্ট হইছে। প্রণোদনার আওতায় রোপা আমন ধান বীজ এবং সার বিনামূল্যে বিতরণের মাধ্যমে তাদের সাহায্য করা হয়েছে।'
চলতি বছরের বন্যায় সুনামগঞ্জের কৃষিখাত প্রায় ৪৫ কোটি টাকার ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে।