বরেন্দ্রর সবুজ গালিচার একেকটি পাড়া যেন এক একটি বাথান। লতা, তৃণগুল্মের প্রাচুর্যে, গৃহস্থের গবাদি পশু পালনের উত্তম স্থান। ফলে, বাড়তে থাকে রাখাল বালকের গরুর পাল। আর খামারি বা কৃষকের উদ্বৃত্ত গরুতে ঠাসা থাকে গ্রাম-নগরের পশুবাজার, কাঁকন, মন্ডুমালা, সিটি হাট।
দেশি, শাহীওয়াল, ফ্রিজিয়ান বা অস্ট্রেলিয়ান। গ্রাম ঘুরে সুস্থ সবল এসব গরু খুঁজে-খুঁজে কেনেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
এই যেমন, চারঘাট উপজেলার মুংলি গ্রাম। গ্রামীণ রাস্তার দুইপাশজুড়ে অন্তত চল্লিশ ঘরের প্রত্যেকেই জড়িত গরু কেনাবেচায়। সাপ্তাহিক হাটে বিক্রির লক্ষ্যে গ্রামে গ্রামে ঘুরে গরু কিনে সংগ্রহ বাড়ান নিজেদের গোয়ালে।
তারা, গোয়াল ভরা এসব গরু বিক্রি করেন অনলাইন বা সাপ্তাহিক হাটে। তবে চলমান পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বড় পশুর বাজার সিটি হাট বসেনি গেল ২১ ও ২৪ জুলাই। গ্রামীণ হাটে গরু নিয়ে অপেক্ষায় থাকছেন ব্যবসায়ীরা। গেল ২৮ জুলাই সিটি হাট বসলেও আসেনি বাইরের ব্যাপারী। এতে হাটে আনা গরুর সিকি ভাগও বিক্রি হয়নি। পাশাপাশি ফেসবুক না থাকায় গেল দশ দিনে অনলাইন অর্ডার আসেনি ব্যাপারীর কাছে। এতে বিক্রি কমায় বেড়েছে গরুর লালন পালন ব্যয়।
ব্যবসায়ীদের একজন বলেন, ‘গরু তো বিক্রি করতে পারছি না। একটা গরু থাকলে সপ্তাহ শেষে দুই হাজার টাকা খরচ হয়ে যায় আর ১০ টা থাকলে ২০ হাজার টাকা। কিন্তু গরু তো বিক্রি করতে পারছি না।’
আরেকজন বলেন, ‘গরু বিক্রি হচ্ছে এখন। আর বিক্রি না হওয়াতে ক্ষতির মুখে পড়ে যাচ্ছি। বাজারে নিয়ে গেলে দাম তেমন পাচ্ছি না।’
কারফিউ শিথিলে, জেলার অন্যান্য হাট চালু হলেও রাস্তায় পরিবহন স্বল্পতা, নিরাপত্তাহীনতা, আর দূরের জেলার ব্যাপারী ও খামারির না আসার প্রভাব পড়েছে গরুর দামে। ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকার গরু বিক্রি হচ্ছে ২৮ থেকে ৩২ হাজারে।
ব্যাপারীদের একজন বলেন, ‘কারফিউয়ের কারণে আমাদের বাহিরের ক্রেতারা ভয়ে আসতে পারছে না হাটে।’
এ অবস্থায় গরু বিক্রি না হওয়ায় হাটে কমছে মাশুল আদায়ের হার। তাতে, পুঁজি থেকে হাটের শতাধিক শ্রমিকের ব্যয় মেটাতে হচ্ছে হাট ইজারাদারদের। সেইসঙ্গে গরুর ব্যবসায়ীদের অনুরোধে হাটে ব্যাপারীদের আনার চেষ্টা করছেন তারা। প্রত্যাশা দ্রুতই সমাধান হবে এমন সংকটের।
প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর বলছে, রাজশাহী জেলায় প্রায় ১৭ হাজার খামারির গোয়ালে মাংসের জন্য প্রস্তুত ও উদ্বৃত্ত আছে ১ লাখ ২০ হাজারের বেশি গরু-মহিষ। যার সিংহভাগ বেচাকেনা নির্ভর করে নগরের সিটি হাটের ওপর।