৭৬ বছর পর ২০১২ সালে এন্ডি মারে যখন প্রথম কোনো ব্রিটিশ পুরুষ হিসেবে গ্র্যান্ড স্লাম জিতেছিলেন। তখন ব্রিটিশদের বাঁধভাঙা উল্লাস ছিলো দেখার মতো। যেন শত বছরের প্রতীক্ষা অবসানের পর মরুভূমির বুকে অনিন্দ্য সুন্দর বর্ষণের আনন্দে মাতোয়ারা সবাই। কিন্তু ক্যারিয়ারের গোধূলী লগ্নে অ্যান্ডি। সময় হয়েছে তার সব হিসাব মেলানোর। সম্ভাবনাগুলোর প্রাপ্তি হলো কতটা আর কতোটা'ই বা হয়েছে মরীচিকা। সে যাই হোক।
অ্যান্ডি মারে টেনিস আকাশে উজ্জ্বল এক নক্ষত্র হয়ে উঠতে পারতেন। কিন্তু বৃটিশদের কাছে নক্ষত্র হয়ে উঠলেও ফেদেরার, নাদাল কিংবা জকোভিচদের মতো কিংবদন্তিদের জায়গায় যেতে পারেননি। নির্মম সত্য এটাই। সামর্থ্য থাকার পরেও কেন পারেননি। তার অন্যতম কারণ অদৃশ্য শত্রু ইনজুরি।
সারা বিশ্বের শীর্ষ অভাগা খেলোয়াড়দের তালিকা করা হলে সম্ভবত সেখানে অবধারিতভাবে আসবে ব্রিটিশ টেনিস তারকা স্যার এন্ডি ব্যারন মারের নাম। অবাক হতে পারেন। তবে শেন ওয়ার্নের যুগে স্টুয়ার্ট ম্যাকগিল, মুরালির সময়ে রঙ্গনা হেরাথ কিংবা এমএস ধোনির সময়ে দিনেশ কার্তিক। তাদের ক্ষেত্রে যেমন বলা হয় তারা ভুল সময়ে জন্মেছেন। সেই একইভাবে অ্যান্ডি মারেকেও সেই দুর্ভাগাদের দলে অন্তর্ভুক্ত করা যায়।
তবে মোটে তিনবার গ্ল্যান্ড স্লাম জিতে নাইট উপাধি পাওয়া স্যার এন্ডি মারের দুর্ভাগ্য যেন অন্য সবার চেয়ে বেশি। কারণ নিজের সেরা সময়ে অ্যান্ডি মারেকে খেলতে হয়েছে রজার ফেদেরার, রাফায়েল নাদাল ও নোভাক জোকভিচের মতো টেনিসের কিংবদন্তিদের সাথে। প্রায় সম মানের খেলোয়াড় হওয়া সত্ত্বেও রজার ফেদেরারের ২০টি গ্র্যান্ড স্লাম, রাফায়েল নাদালের ২২ টি ও নোভাক জোকোভিচ ২৪টি গ্র্যান্ড স্লামের বিপরীতে অ্যান্ডি মারের ক্যারিয়ারে মাত্র ৩টি।
অথচ টেনিস র্যাংকিংয়ে তার টানা ৪১ সপ্তাহ শীর্ষে থাকার রেকর্ড, ২০২২ সাল পর্যন্ত ছিলো অক্ষুণ্ন। অ্যান্ডি মারেই একমাত্র টেনিস তারকা যিনি ফেদেরার, নাদাল ও জকো এই বিগ থ্রি'র সবাইকে কমপক্ষে সাত বার করে হারিয়েছেন।
এই পরিসংখ্যানে বলছে , কতটা তুমুল প্রতিভার অধিকারী ছিলেন মারে। তবে বেরসিক ভাগ্যটা পক্ষে থাকলে নিশ্চিতভাবেই হয়তো গ্র্যান্ড স্লামের সংখ্যা আরও বাড়তো।
একমাত্র টেনিস তারকা হিসেবে অলিম্পিক্সে দুটি স্বর্ণ পদক জেতা অ্যান্ডি মারের এই সাফল্য যেন পুরো ক্যারিয়ারের ব্যতিক্রম। সেই অলিম্পিক মঞ্চেই বিদায় নিতে যাচ্ছেন অ্যান্ডি।
পুরো ক্যারিয়ারটা মনের মতো না হলেও ২০ বছরের ক্যারিয়ারে মারে নিজেকে অন্যতম সফল ক্রীড়াবিদ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সেলিব্রেটি নেট ওর্থের হিসাব অনুযায়ী এন্ডি মারের মোট সম্পদের পরিমাণ ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। খেলোয়াড়ি জীবনে প্রতিবছরে প্রায় ১০-১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছেন।
যার মধ্যে প্রায় ৫ মিলিয়ন আয় এসেছে টেনিস কোর্ট থেকে বাকিটা স্পন্সরশিপ ও অনুমোদিত চুক্তি থেকে। পুরো ক্যারিয়ারে শুধু কোর্ট ফ্যাক্টরিংয়ে মারের আয় ৬৪'৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। একটা সময়ে টেনিস তারকাদের মধ্যে ফেদেরার, নাদাল, জোকোভিচদের আয়ের দিক থেকে ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন ব্রিটিশ এই টেনিস তারা।
ক্যারিয়ারের ইতি টেনে মারেও হয়তো সম্পদের হিসাব করতে বসবেন তবে তার আগে আপাতত প্যারিস অলিম্পিক্সে শেষটা রাঙানোর দিকেই বেশি নজর থাকবে এই ব্রিটিশ তারকার। অলিম্পিকের সংস্করণে অবশ্য এই ব্রিটিশ তারকাই রাজা। তাই বিদায়টা অন্তত রাজা বেশেই হোক এমন প্রার্থনাই থাকবে সমর্থকদের।