শিক্ষা
দেশে এখন
0

সেশনজট-শিখন ঘাটতি কমাতে দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পরামর্শ শিক্ষাবিদদের

চলমান পরিস্থিতিতে স্থগিত মাধ্যমিকের ষান্মাষিক সামষ্টিক মূল্যায়ন, এইচএসসি পরীক্ষা, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বর্ষের ও সেমিস্টারের পরীক্ষা এবং বেশকিছু চাকরির পরীক্ষাও। পরীক্ষা স্থগিতের এই বিরতি দীর্ঘ হলে শিক্ষার্থী-পরীক্ষার্থীদের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন শিক্ষাবিদরা। সেশনজট-শিখন ঘাটতি যেন না বাড়ে সে জন্য শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে দ্রুত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পরামর্শ তাদের।

নতুন শিক্ষাক্রমে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হবে ২০২৬ সাল থেকে। যে পদ্ধতিতে পরীক্ষা হবে, প্রথমবারের মতো ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণি পর্যন্ত সে সিলেবাস অনুযায়ী চলছিল ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন। কিন্তু ১৫ জুলাই পর্যন্ত ৪টি বিষয়ের মূল্যায়ন হলেও চলমান পরিস্থিতিতে স্থগিত করা হয় বাকি পরীক্ষাগুলো।

চলতি এইচএসসি পরীক্ষা গত ৩০ জুন শুরু হলেও বন্যার কারণে সিলেট বিভাগের পরীক্ষা শুরু হয় ৯ জুলাই থেকে। বর্তমানে সব শিক্ষাবোর্ডের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষাও স্থগিত রয়েছে।

যে ক্যাম্পাস শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত থাকে সব সময়, সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও এখন নীরব-শুনসান। কিছু বিভাগ ও বর্ষের সেমিস্টার ফাইনাল শেষ হলেও, অনেকের এখনও বাকিই রয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রায় সব পাবলিক-প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়েও একই অবস্থা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ছুটি আরও দীর্ঘ হলে দেখা দিতে পারে সেশন-জটের শঙ্কা।

একইভাবে ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষাসহ সব পরীক্ষা স্থগিত করেছে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন। স্থগিত ব্যাংকসহ আও বেশ কিছু চাকরির পরীক্ষা।

করোনার ধাক্কা সামলে উঠেই যখন শিখন ঘাটতি পূরণ হতে চলেছে এমন সময় চলতি বছরের শুরু থেকেই শৈত্যপ্রবাহ, তাপপ্রবাহ, বন্যাসহ নান প্রাকৃতিক দুর্যোগে বন্ধ থেকেছে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এদিকে আবার মাধ্যমিকের সব শ্রেণির চলমান ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন, এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা, বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিস্টার ফাইনাল এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষাও চলমান পরিস্থিতিতে স্থগিত হয়েছে। এই যে ছন্দপতন, এতে শিক্ষার্থী, পরীক্ষার্থী বা চাকরিপ্রার্থীর কতটা ক্ষতি হচ্ছে। আর তা পুশিয়ে নেয়ারই বা উপায় কী?

নতুন পদ্ধতিতে মাধ্যমিকে সারাদেশে যে ষান্মাসিক মূল্যায়ন চলছে তা আপাতত বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের তেমন ক্ষতি হবে না বলে মনে করেন আজিমপুর গভ. গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক গীতাঞ্জলি বড়ুয়া। তবে প্রয়োজন হতে পারে অতিরিক্ত ক্লাসের।

তিনি বলেন, 'নতুন ধরনের এ মূল্যায়ন পদ্ধতির সাথে আস্তে আস্তে খাপ খাওয়ানো শুরু করেছি। একইসঙ্গে অভিভাবকদের মনেও অনেক জিজ্ঞাসা ছিল, তারাও একটু একটু ধারণা পেতে শুরু করেছিলেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবারও হয়তো মূল্যায়ন শুরু হবে। তবে, বাচ্চারা তো একটু বাধাগ্রস্ত হয়েছেই। অ্যাকাডেমিক এবং মানসিকভাবে ফিরিয়ে আনতে দু'একটি অতিরিক্ত ক্লাসের প্রয়োজন হতে পারে।'

মাধ্যমিকের মূল্যায়ন বা এইচএসসি পরীক্ষা অথবা চাকরির পরীক্ষায় দীর্ঘ বিরতি হলে শিক্ষার্থীদের উপর তার বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন শিক্ষা গবেষক ড. মোস্তাফিজুর রহমান। শিগগিরই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পরামর্শ তার।

ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'এভাবে চলতে থাকলে তো সেশনজটে পড়বে। এ থেকে বের করে আনতে হলে প্রথমেই খুব দ্রুত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে। শিখন ঘাটতি পূরণ এবং মানসিক ট্রমা থেকে ফিরিয়ে আনতে দুই দিক দিয়েই কাজ করতে হবে।'

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার দিকেও খেয়াল রাখার পরামর্শ শিক্ষাবিদদের।

এসএস