আষাঢ়ে ব্যস্ততা বাড়ে পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার প্রায় ১২টি গ্রামের কৃষকদের ভাসমান সবজি চাষে। এখানকার ভাসমান বেড তৈরির পর উপরিভাগ আবাদ উপযোগী হতে প্রায় ১৫ থেকে ২০ দিন সময় লাগে। এরপর ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে চারা গজায়। ভাসমান এই বেডে মৌসুম ভেদে বীজতলার কোনোটায় পেঁপে, লাউ, কুমড়াসহ বিভিন্ন জাতের শাকসবজির চারা উৎপাদন হয়।
উৎপাদিত এসব সবজি ও চারা নিয়েই বেঠাকাটার ঐতিহ্যবাহী ভাসমান সবজির হাট বসে ছোট ছোট ডিঙি নৌকায়। তবে সম্ভাবনাময় এই কৃষিক্ষেত্রে কোন সরকারি সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ স্থানীয় কৃষকদের।
ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষে কৃষকদের পাশাপাশি শ্রমদেন কৃষাণীরাও। তাদের হাতে নিখুঁত ভাবে তৈরি হয় এক একটি বীজতলা। এসব গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই দেখা যায় বীজতলা তৈরিতে নারীর ব্যস্ততা। প্রতি ১ হাজার বীজতলা বিক্রি হয় ৬ থেকে ৮ হাজার টাকায়।
কৃষকদের একজন বলেন, 'ব্যাপারীরা এসে আমাদের কাছ থেকে পাইকারি দামে নিয়ে যায়।'
তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, তাদের পরামর্শে ভাসমান বেড পদ্ধতিতে চাষাবাদে ভালো ফল পাচ্ছেন চাষিরা। কৃষকদের পাশে থেকে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে দাবি কৃষি কর্মকর্তাদের।
পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলা কৃষি অফিসার ইশরাতুন্নেসা এশা বলেন, 'তারা কাজ করছে জৈব কৃষি নিয়ে। কচুরিপানা পচে জৈব সার হচ্ছে। কিন্তু তারা উপরে কীটনাশক ব্যবহার করার ফলে জৈব কৃষি করতে পারছে না। আমরা তাদের উৎসাহ দিচ্ছি জৈব কৃষি করতে।'
পিরোজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মো. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, 'সবজি চাষকে জনপ্রিয়তা করার লক্ষ্যে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।'
বিলাঞ্চলে ভাসমান বেডে উৎপাদিত সবজি চারা দেশের চাহিদার বড় অংশ মিটিয়ে থাকে নাজিরপুরের কৃষকরা। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, কৃষকদের সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করা গেলে যেমন এই ধরনের আবাদের পরিধি বাড়বে, তেমনি পুষ্ট হবে স্থানীয় কৃষি অর্থনীতি।
পিরোজপুর সরকারি সোহওয়ার্দী কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, 'নিজেরদের উদ্যোগে কৃষকরা এইগুলা করছে। তাদেরকে সরকারিভাবে কম সুদে ঋণ দেয়া যায় কিনা সে ব্যাপারে নজর দিতে হবে।'
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর ও স্বরুপকাঠিতে এবছর ৩০৮ হেক্টর জমিতে ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চারা চাষ করা হচ্ছে, যা থেকে ফলন হতে পারে সাড়ে ৫ হাজার টন শাকসবজি, যার বাজারমূল্য ধরা হয়েছে প্রায় ২৫ কোটি টাকা।