আমদানি-রপ্তানি
অর্থনীতি
0

এক দশকে কতটুকু ডিজিটালাইজড হয়েছে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর!

দেশের আমদানি-রপ্তানির বিপুল কর্মযজ্ঞ সামাল দিতে এতদিনে শতভাগ ডিজিটালাইজড হওয়ার কথা ছিলো দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম বন্দরের। এক দশকে আদতে কতটা হয়েছে তা? আর কতটুকুই বা সুফল পাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা?

বিশ্বের বিভিন্ন বন্দর থেকে পণ্য নিয়ে জাহাজ ভিড়ার পর শুরু হয় কর্মযজ্ঞ। কর্ণফুলী নদী থেকে সাগরে ২০ নটিকেল মাইল পর্যন্ত এসব জাহাজ মনিটর করতে পুরো এলাকাকে আনা হয়েছে ভিটিএমএস সফটওয়্যারে। ফলে সাগরে কোন জাহাজ কোথায়, কীভাবে অবস্থান করছে ও কী কাজ চলছে সেখানে সবই দেখা যায় বন্দরের মনিটরে। এছাড়া জাহাজ থেকে কনটেইনার নামানো হয়েছে কিনা, কোথায় রাখা হয়েছে, সবই বর্তমানে জানা যাচ্ছে অনলাইনে।

বছরে ৩০ থেকে ৩২ লাখ পণ্যভর্তি কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয় বন্দরে। ২০১১ সালে স্বয়ংক্রিয় কনটেইনার ব্যবস্থাপনা সিটিএমএস চালু করে চট্টগ্রাম বন্দর। এই ব্যবস্থাপনায় নতুন সংযোজন টার্মিনাল অপারেটিং সিস্টেম- টস। কথা ছিল এই সিস্টেমে জাহাজ থেকে কনটেইনার লোডিং, আনলোডিং, ইয়ার্ডে কনটেইনার স্থানান্তর, ট্র্যাকিং, ডেলিভারি, গেট কন্ট্রোলসহ সব কাজই অনলাইনে হবে। তবে প্রশ্ন হচ্ছে প্রকৃত অর্থে কতটুকু ডিজিটাল হয়েছে বন্দরের এসব সেবা?

বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোটস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব রুহুল আমিন শিকদার বিপ্লব বলেন, 'একটা সময় ছিল টসে কনটেইনার লোকেশন দেখতে গিয়ে আমরা ভুল লোকেশন পেতাম। আবার অনেকগুলোর লোকেশন খোঁজেও পাওয়া যাবে না। কিন্তু বর্তমানে এই সমস্যা অনেকাংশে দূর হয়ে গেছে।'

পণ্য আনা নেয়ার কাজে এ বন্দরে প্রবেশ করে বছরে ২২ লাখ গাড়ি এবং ৫০ লাখের বেশি মানুষ। গেটে টোল পরিশোধ, জেটিতে পণ্য নিয়ে বিপুল এ গাড়ির চলাচল নিয়ন্ত্রণ হয় ভেহিকেল কন্ট্রোল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে। এতে সময় ও ভোগান্তি কমছে ব্যবসায়ীদের।

তবে পুরোপুরি সুফল মিলছে না ওয়ান স্টপ সার্ভিসের। এখানে কিছু সেবা অনলাইনে মিললেও বিভিন্ন নথিপত্র ভেরিফিকেশন এবং স্বাক্ষরের জন্য আগের মতোই ঘুরতে হচ্ছে ১২ থেকে ১৫টি টেবিল। এতে সময়ক্ষেপণের পাশাপাশি হচ্ছে ভোগান্তি।

শিপিং এজেন্টরা বলছেন, এখনো ৫০ শতাংশ খোলা পণ্য বন্দরের ইয়ার্ড থেকে ডেলিভারি দেয়া হয়, যা বন্দরের গতিশীলতা ও ডিজিটাইলেশনের অন্যতম বাঁধা।

বাংলাদেশ কনটেইনার শিপিং অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শামসুদ্দিন চোধুরী মিনার বলেন, 'যখন ডেলিভারি কোনো কারণে এক-দুইদিন বন্ধ থাকে, তখন আমদানি জট হয়ে যায়। সারা পৃথিবী ব্যাপী আমদানিকৃত কনটেইনার কিন্তু বন্দরে এসেই বাইরে চলে যায়। এখন ৩৭টা পণ্য ছাড়া অন্য সব পণ্যই কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ডেলিভারি করি।'

আগামীতে ১৫০ বিলিয়ন ডলারের আমদানি রপ্তানির চাপ সামলাতে হবে এ বন্দরকে। মাতারবাড়ি বন্দর, বে-টার্মিনাল, ইকোনমিক জোনসহ বাড়ছে পরিধি। তাই সবশেষ আইটি সিস্টেমের সংযোজনের পাশাপাশি বন্দরের জনবলকেও প্রশিক্ষিত করার আহ্বান ব্যবসায়ীদের।

বিএসআরএম'র ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমের আলী হোসেইন বলেন, 'আমরা এখন সবকিছু মিলিয়ে উন্নতির দিকে আছি। তবে কিভাবে এই উন্নতিটা আরও দ্রুত করতে পারি সেই দিকেই নজর দেওয়া উচিত।'

তবে দায় কি শুধুই বন্দরের? এখানকার আমাদনি-রপ্তানি বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত অন্তত ২১টি সংস্থা। অপারেশন সিস্টেম পুরোপুরি পেপার লেস করতে হলে লাগবে সমন্বিত উদ্যোগ।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, 'ব্যবহারকারীদের সবাইকেই অনলাইনে আসতে হবে। অনেকেই আছে যারা এখনো অনলাইনে অভ্যস্ত হয়নি। যদি সবাই এই সিস্টেমে চলে আসে তাহলে অগ্রগতি আরও বাড়বে।'

বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, চট্টগ্রাম বন্দরকে শতভাগ ডিজিটাল করতে মোট ৫০টি মডিউলে কাজ চলছে। এরমধ্যে মোট ২১টি সফটওয়্যার সিস্টেম বাস্তবায়ন হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে সিএন্ডএফ এজেন্টস ও বিভিন্ন সংস্থার কর্মচারীদের ডিজিটাল জ্ঞান না থাকা বড় চ্যালেঞ্জ।