পানির স্রোতে ভাসছে পুরো এলাকা। রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, ফসলের মাঠ ও মাছের ঘের এখনও পানির নিচে। ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি কমায় সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও কমেনি দুর্ভোগ।
সুনামগঞ্জ সদর, দোয়ারাবাজার, ছাতক, তাহিরপুরসহ সাত উপজেলার ১ হাজার ১৮টি গ্রাম ভাসছে বানের জলে। গেল ৫ দিন ধরে তলিয়ে আছে ফসলি জমি। পানিবন্দি রয়েছেন জেলার সাড়ে ৬ লাখ মানুষ। জেলা সদরের সঙ্গে এখনও সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন তাহিরপুর উপজেলার। তবে কিছুটা পানি কমেছে পৌর শহরের তেঘরিয়া, আরপিন নগর, বড়পাড়াসহ কয়েকটি এলাকায়।
এদিকে বন্যার পানি থেকে রক্ষা পেতে যেসব মানুষ ছুটে গেছেন আশ্রয়কেন্দ্রে ভোগান্তিতে পড়েছেন তারাও। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে দেখা দিয়েছে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট।
বাড়ির উঠোনজুড়ে বন্যার পানি। ছবি: এখন টিভি
বানবাসীদের একজন বলেন, 'আমরা বাচ্চা নিয়া না খাইয়া আছি। কালকে আমাদের ভাত দিছে। আর আজকে কারও কোনো খোঁজ নাই।'
এদিকে টানা পাঁচ দিনের সীমাহীন ভোগান্তির পর পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে সিলেটে। ১৩ উপজেলায় পানি কমায় দৃশ্যমান হচ্ছে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র। ভেঙে গেছে সড়ক, ভেসে গেছে মাছের ঘের। তবে এখনও পানিতে নিমজ্জিত মহানগরীর যতরপুর, উপশহর, মেন্দিবাগ ও ঘাসিটুলা এলাকা।
শুক্রবার (২১ জুন) সকালে সিলেট নগরীর ক্বীন ব্রিজ এলাকায় সুরমা নদী পরিদর্শন করেছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক।
তিনি বলেন, 'সিলেট ও সুনামগঞ্জকে বন্যার কবল থেকে রক্ষা করতে দ্রুতই নদীতে ড্রেজিং কার্যক্রম চালানো হবে।'
মানুষের সীমাহীন দুর্ভোগ। ছবি: এখন টিভি
এদিকে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে হবিগঞ্জে। কুশিয়ারা নদীর বাঁধ উপচে প্রবল বেগে পানি ঢুকছে নবীগঞ্জ উপজেলায়। প্লাবিত হয়েছে ইনাতগঞ্জ, দিঘলবাগ ও আউশকান্দি ইউনিয়নের ২৫টি গ্রামের অন্তত ৪০ হাজার মানুষ। এখন পর্যন্ত ৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১ হাজার মানুষ ঠাঁই নিলেও অধিকাংশ মানুষ ভোগান্তি নিয়েই রয়েছেন নিজ বাড়িতে।
বন্যা আক্রান্তরা বলেন, ২০২২ সালের বন্যার চেয়ে ২৪ সালের বন্যা কোনো অংশে কম নয়। আমরা অনেক কষ্টে আছি। অনেক ক্ষতি হইছে। প্রতি বছরেই বন্যা হয়।
থেমে থেমে বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে মৌলভীবাজারে। এতে মনু, জুরি ও কুশিয়ার নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। নদী উপচে পানি ঢুকছে লোকালয়ে। সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জেলা সদর, রাজনগর, বড়লেখা, জুড়ি ও কুলাউড়া।
এর আগে ২০২২ সালে ভয়াবহ বন্যায় সিলেট বিভাগে শুধুমাত্র কৃষি ও মৎস্য সম্পদের ক্ষতি হয়েছিল প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা।