লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা-শারীকা লাকা লাব্বাইক। আমি হাজির, হে আল্লাহ! আমি উপস্থিত, আপনার ডাকে সাড়া দিতে, আমি হাজির। শনিবার (১৫ জুন) সূর্যোদয়ের পর থেকে লাখো মুসল্লির কণ্ঠে এই একই ধ্বনিতে মুখর আরাফার ময়দান।
আল্লাহর দরবারে হাত তুলে সন্তুষ্টি কামনা করছেন তারা। চোখের পানিতে জানাচ্ছেন জীবদ্দশার গুনাহ মাফের ফরিয়াদ। ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের তীব্র গরম উপেক্ষা করেই খোলা মাঠে লাখো মুসল্লির সমাগম।
ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ হজ পালন করতে এখানে আসতে পেরে মহান আল্লাহকে ধন্যবাদ জানান মুসল্লিরা। তাদের একজন বলেন, 'আল্লাহ যেন আমাদের হজকে কবুল করেন। আমরা হজ পালন করছি। তার দয়ায় আমরা আরাফার ময়দানে আসতে পেরেছি। আল্লাহ যেন আমাদের মাফ করে দেন।'
জোহরের আযানের পর মসজিদে নামিরায় অনুষ্ঠিত হয় বিশাল জামাত। যেখানে ইমামতি করবেন পবিত্র মসজিদুল হারামের ইমাম ও খতিব শায়েখ ড. মাহের বিন হামাদ বিন মুয়াক্বল আল মুয়াইকিলি। এরপরই শুরু হয় খুতবা পাঠ। যেখান থেকে বিশ্বনবী বিদায়ী ভাষণ দিয়েছিলেন। এ বছর বাংলাসহ ৫০টি ভাষায় হজের খুতবা অনুবাদ করা হবে।
এর আগে মিনায় রাত্রিযাপন শেষে হজে অংশগ্রহণকারীরা রওয়ানা দেন আরাফাতের উদ্দেশ্যে। পায়ে হেঁটে কিংবা যানবাহনে, যে যেভাবে পেরেছেন মিনা থেকে ১৪ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছেছেন আরাফাতে।
হাজিরা বলেন, আল্লাহ'র ইচ্ছায় আরাফাতের ময়দানে পৌঁছেছি। আল্লাহ যেন আমাদের কবুল করেন। অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। এই অনুভূতি অসাধারণ। হজ করা আমাদের জন্য স্বপ্ন ছিল। আল্লাহর ইচ্ছায় মক্কায় এসেছি। আরাফাতের ময়দানেও পা রাখলাম। আশা করি শান্তিপূর্ণভাবে হজ পালন করতে পারবো।
মসজিদে নামিরায় জোহর ও আসরের নামাজ শেষে মুজদালিফার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেবেন হাজিরা। সেখানে পৌঁছে মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করবেন তারা। নামাজ শেষে মুজদাফির খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাবেন।
এসময় ইবাদতের পাশাপাশি পাথর সংগ্রহ করবেন মুসল্লিরা, যা মিনায় ফিরে পরের তিনদিনে শয়তানের প্রতীক জামারা লক্ষ্য করে ছুঁড়বেন। এর মধ্যে ১০ জিলহজ, রোববার পবিত্র ঈদুল আজহায় আত্মত্যাগের নিদর্শন হিসেবে পশু কোরবানিতে অংশ নেবেন হাজিরা, একই সঙ্গে আত্মশুদ্ধির নিদর্শন হিসেবে মাথা মুণ্ডন করবেন এবং ইহরাম খুলে ফেলবেন।
মঙ্গলবার মক্কায় ফিরে সাতবার কা'বা তাওয়াফ করে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মাঝখান থেকে হেঁটে যাবেন হাজিরা। এর মধ্য দিয়ে শেষ হবে হজের পাঁচ দিনের আনুষ্ঠানিকতা।
এবছর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় ২০ লাখ মুসল্লি অংশ নিয়েছেন পবিত্র হজে। তাদের স্বাস্থ্যসুরক্ষা ও নিরাপত্তায় যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছে সৌদি সরকার।