আষাঢ় মানে ঘন কালো মেঘ, ঝুম বৃষ্টি আর পাগলা হাওয়া। আষাঢ় মানে টিনের চালে রিমঝিম ছন্দ। স্কুল ছুটির পর বৃষ্টিতে দল বেঁধে ফুটবলে মেতে উঠা।
প্রার্থনা শেষ হতেই বৃষ্টি আগামনী গর্জনে বাড়ে কৃষকের ব্যস্ততা। গরমের উত্তাপ ছাপিয়ে আষাঢ়ে নেমে আসে মেঘদূত। বৃষ্টির প্রতি ফোটায় প্রশান্তি ছড়িয়ে যায় শহর, নগর, বন্দর ছাপিয়ে পাড়া মহল্লায়। আকাশের জল ভিজিয়ে দেয় মন ও শরীর। ভিজে তৃপ্ত হয় প্রকৃতি।
নদীতে বাড়ে পানি আরও বাড়ে মাছের সংলাপ। সাদা বক সহজেই খুঁজে পায় তার প্রিয় শিকার। আর বৃষ্টি বাড়লে জমির কৃষক নেমে পড়ে জাল হাতে। গ্রামের পথ দিয়ে কৃষানি ফিরে যায় বাড়ি। আকাশ থেকে যায় মেঘেদের দখলে।
আষাঢ় মাসের থৈই থৈই পানি সামাল দিতে প্রস্তুত জনপদ। প্রস্তুত ঘর বাড়ি সাথে জেলে পাড়া। বৃষ্টি নামলেই গ্রামের রসুই ঘরে ভাজা হয় চাল। অথবা ঘরের কর্ত্রী বসেন চাল ডাল নিয়ে খিচুড়ি রাঁধতে।
প্রস্তুত নৌকার মাঝি নৌকা নিয়ে। এ মাসেই দেখা মিলে নৌকা বাইচের। এ বর্ষা অনেককে নিয়ে যায় পুরনো দিনে, মনে করিয়ে দেয় ছেলে বেলার কথা। সেই কাদায় মাখামাখি আর বৃষ্টিতে ভেজা।
শহরে আষাঢ় আসে ভিন্ন গল্পে। আলসে দিন, চায়ের কাপে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে। কেউবা ভেজার ভয়ে শান্ত, আবার কেউ ভিজে ভিজে ক্লান্ত।
সুদূর প্রাচীনকাল থেকেই বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি ও শিল্পকলার অঙ্গন আষাঢ় বন্দনায় উচ্ছ্বসিত। কবির কবিতায়, শিল্পীর সুরে-গানে, চারুশিল্পীর তুলির আঁচড়ে, সমৃদ্ধ ভাণ্ডার রয়েছে বর্ষার বৃষ্টির রূপবর্ণনায়। আষাঢ় মাসের মেঘে মেঘে যেন প্রকাশ পেয়েছে মন খারাপ, স্নিগ্ধতা, প্রশান্তির আবার কখনো উল্লাসের।
আষাঢ় মাস যেন এসেছে প্রকৃতিকে আবার সতেজ করতে। নির্ভেজাল বাতাস আর পিচ্ছিল উঠান যেন মনে করিয়ে দেয় আমাদের পূর্বপুরুষের কথা।