দেশে এখন
0

দুধ উৎপাদনে শীর্ষ দেশগুলোর ধারে কাছেও নেই বাংলাদেশ

মাছ-মাংস উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও দুধ ও দুগ্ধজাত উৎপাদনে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুসারে যেখানে একজন মানুষের দৈনিক ২৫০ মিলিলিটার দুধ পান করার কথা। সেখানে দেশের মানুষ পাচ্ছেন গড়ে কেবল ২২২ মিলিলিটার। এজন্য দেশে গো-খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং দেশি গাভীর দুধ উৎপাদন সক্ষমতার অভাবকে মোটা দাগে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে আশার কথা হলো সংকরায়নের মাধ্যমে উন্নত জাত উদ্ভাবন করে তা দেশব্যাপী সরবরাহের কথা জানাচ্ছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।

প্রণামিয়া পাটনী কহিছে জোড় হাতে, আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে। প্রখ্যাত কবি ভারতচন্দ্র রায়গুনাকরের এ বিখ্যাত কবিতাছত্রটিই যেন আজকের দিনে অন্যতম চাওয়া।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী একজন প্রপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক ২৫০ মিলিলিটার দুধ পান করা উচিত। আর প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে বাংলাদেশের মানুষের জনপ্রতি দুধ পানের পরিমান ২২২ মিলিলিটার। কম দুধ পানের প্রধান কারণ আমাদের দুধ উৎপাদনও কম।

নাহার এগ্রোর ডেইরি ও পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হুমায়ুন কবির বলেন, 'একটা ভালো প্রডাকশন থেকে দিনে ১০ থেকে ১২ লিটার দুধ উৎপাদন হওয়ার কথা। কিন্তু গড়ে আমাদের ৪ থেকে ৫ লিটার দুধ, আবার অন্য কোনো ক্ষেত্রে এর চেয়েও কম হয়ে যায়।'

জাতিসংঘের ফুড এন্ড এগ্রিকালচারের গবেষণায় দেখা যায়, বিশ্বে যে পরিমাণ দুধ উৎপাদন হয় তার ৪৪ শতাংশের যোগান দেয় এশিয়ার দেশগুলো। সেখানে সবচেয়ে বড় হিস্যা ভারতের। দেশটি চাহিদার প্রায় ২৩ শতাংশ দুধ যোগান দেয়। এরপরই যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান ও চীনের অবস্থান। অথচ বাংলাদেশ এ সারিতে একেবারে পেছনের সারির একটি দেশ।

বাংলাদেশে দুধের ঘটতির নানান কারণ রয়েছে। প্রধান কারণ দেশি গাভির দুধ উৎপাদন সক্ষমতা কম। পৃথিবীর নানান দেশে একেকটি গাভী ৭০ লিটার পর্যন্ত দুধ দেয়। যেখানে দেশি গাভির দুধ উৎপাদন সক্ষমতা মাত্র ৮ থেকে ১০ লিটার। এছাড়াও দুধ সংরক্ষণে বিশেষ ব্যবস্থার প্রয়োজন পড়ে যা প্রান্তিক খামারীদের সক্ষমতার বাইরে। এতে নিরুপায় হয়েই কম দামে দুধ বিক্রিতে বাধ্য হন খামারিরা। গোখাদ্যের সাথে উৎপাদিত দুধের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় অনেক খামারিই দুধ উৎপাদনে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, 'দুধ সংরক্ষণ করা যায় না, এর জন্য স্পেশাল প্রসিডিউর লাগে। এজন্য সাধারণ খামারিরা লসের দিকে আছে।'

শুধু উৎপাদন সক্ষমতাই নয়, আছে মানসম্মত স্থানীয় গোখাদ্যের অভাবও। তাই গো খাদ্যের অনেকটাই আমদানী নির্ভর। কিন্তু আমদানীতেও শুল্ক একটি বড় বাধা বলে মনে করেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. ইকবাল হোসাইন বলেন, 'বর্তমানে গো-খাদ্যের ক্ষেত্রে ট্যাক্সরেট এবং ফিট মিলারদের ট্যাক্সরেটের মধ্যে পার্থক্য আছে। কর্মাশিয়ালি আমদানিকারকদের ক্ষেত্রে ট্যাক্সরেটটা কমালে গো-খাদ্যের দাম কমবে। এতে খামারিরা উপকৃত হবে।'

তবে সরকারী প্রচেষ্টায় গাভীর জাত উন্নয়ন ও দুধ উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্যোগের কথা জানাচ্ছে প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর। এসব চষ্টো সফল হলে আগামী দুই থেকে আড়াই বছরেই দুধ উৎপাদনে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে বলে দাবি তাদের।

এসএস