দেশে এখন

কুমিল্লায় আঙুর চাষে দুই কৃষকের সফলতা

কুমিল্লায় আঙুরের চাষে সফলতা পেয়েছেন দুই কৃষক। পরিপক্ক হলে বাজারে আসবে এসব আঙুর। কৃষি বিভাগ বলছে, এখানকার মাটি যেহেতু এই বিদেশি ফল উৎপাদনে উপযোগী তাই এর গুনাগুন বাড়াতে আরও গবেষণা চালাবে গবেষকরা।

কুমিল্লার প্রবাস ফেরত যুবক আনোয়ার হোসেন দেশে ফিরে শুরু করেন পোল্ট্রি ব্যবসা। এরপর ইউটিউবে বিদেশি ফল চাষে কৃষকদের সাফল্য দেখে ৬০শতাংশ জমিতে শুরু করেন আঙুর চাষ। অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে দেবিদ্বার মরিচাঁকান্দা গ্রামের যুবক আনোয়ার পার্শ্ববর্তী ধলাহাস গ্রামে জমি লিজ নিয়ে ভারতের চয়ন জাতের তিনশ' আঙুর চারা রোপন করেন।

প্রথমবারেই বাগানে ভালো ফলন এসেছে। আশা করছেন এবছর ৪০০ কেজি আঙুরের ফলন হবে বাগানে। পরিপক্ক হতে আরও কিছু সময়ের অপেক্ষা করছেন তিনি। ধারনা করা হচ্ছে প্রতি গাছে ২০ থেকে ২৫ কেজি আঙুর পাবেন বাগানি।

গ্রামের মানুষরা শুরুতে বিষয়টি গুরুত্ব না দিলেও এখন প্রতিদিন দূর থেকে মানুষরা আসছেন আঙুর বাগান দেখতে এবং এর চারা সংগ্রহ করতে।

স্থানীয় একজন বলেন, 'আমরা কল্পনাও করতে পারিনি আঙ্গুর এত সুস্বাদু হবে। ফলন অনেক হয়েছে।'

বাগান পরিচর্যা ও নিরাপত্তায় কাজ করছেন বেশ কয়েকজন শ্রমিক। ভালো ফলনে তারাও বেশ উচ্ছসিত।

শ্রমিকদের একজন বলেন, 'নিজের হাতে গাছগুলো লাগিয়েছি এবং পরিচর্যা করার পর ফলন এসেছে। এখন কাজ করতে আরও ভালো লাগছে।'

বেলে দুআশ মাটিতে আঙুরের ফলন বেশ সাফল্য আসলেও পরিপক্কতার পর তা কতটুকু সুমিষ্ট তা বুঝার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছুদিন। একটি আঙুরের গাছে প্রায় ৫০টির বেশি থোকা এসেছে। বছরে দু'বার ফল আহরণ হয় আঙুর বাগান থেকে।

কুমিল্লার দেবিদ্বারের আঙুর বাগানি আনোয়ার হোসেন বলেন, 'এই বাগান করতে একবার পুঁজি লাগবে। দ্বিতীয়বার আর লাগবে না গাছ লাগানোর জন্য। এইটা থেকে ১৫ থেকে ২০ বছর ফলন নেয়া সম্ভব।'

বাংলাদেশের মাটি আঙুরের ফলনের জন্য বেশ উপযোগী। বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে আগামীতে চমক দেখাতে পারবে কৃষকরা। আঙুর চাষে এ সাফল্য বাজারে বিদেশি এই ফল সাশ্রয়ী দামে পাবেন ভোক্তারা বলছেন এই উদ্যোক্তা।

তিনি আরও বলেন, 'বাজারের দাম থেকে ২০ থেকে ৫০ টাকা কমে বিক্রি করবো কারণ পাইকারি বিক্রি করলে এইটা কমে বিক্রি করা যাবে জনসাধারণের জন্য উমুক্ত করে দিবো।'

কুমিল্লায় শুধু আনোয়ার একা নন। সদর দক্ষিণ উপজেলার বলরামপুর গ্রামের কাজী বিল্লাল হোসেনও আঙুরের ভালো ফলনে এবার আশার আলো দেখছেন। তিনিও আশাবাদী এ মাটিতেই বাণিজ্যিকভাবে আঙুর চাষে কৃষকরা সফল হবেন।

আঙুর বাগানি কাজী বিল্লাল হোসেন বলেন, 'একেকটা গাছে ৫৩ থেকে ৫৪ টা আঙুরের থোকা রয়েছে। সবগুলো থোকায় ২৫০ থেকে ৩০০ গ্রাম ফল রয়েছে।'

বাগানকে ঘিরে তরুনদের আগ্রহও ব্যাপক। আনোয়ার ও বিল্লালের সফলতা অনুপ্রাণিত করছে যুবকদের।

কৃষি বিভাগ বলছে, আঙুরের সুমিষ্টতা বাড়াতে গবেষকরা আরো কাজ করবেন।

কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক শেখ আজিজুর রহমান বলেন, 'আমাদের দেশে বর্ষাকালের জন্য  আঙুর টক হয়ে থাকে। এইটা ওভারকাম করা সম্ভব যদি আঙুরের উপর যথাযথ গবেষণা করা হয় তাহলে মিষ্টতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব।'

ডলার সংকট, এলসি খোলায় জটিলতা, আমদানি শুল্ক বাড়ানোসহ নানা কারণে দেশে বিদেশি ফল আমদানি কমেছে।

বাজারে বর্তমানে সবুজ আঙুরের কেজি ৩৬০ টাকা ও কালো আঙুর বিক্রি হচ্ছে ৩৮০ টাকায়।

দেশের বাজারে বিদেশি রসালো ফল হিসেবে আঙুরের বেশ চাহিদা রয়েছে। মাটি ও জলবায়ু এ ফলনের উপযোগী হলে বাড়বে আঙুরসহ বিদেশি দুর্লভ ফলের চাষাবাদ। যার সফলতা ভোক্তাদের জন্য এসব ফলের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করবে।

ইএ

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর