সিলেটে পাহাড়ি ঢলের প্রভাব এখনো ফুরোয়নি, কোথাও বাঁধ ভেঙ্গে গর্জন সুরে শূন্য হাওর ভরাট হচ্ছে পানিতে আবার কোথায় মূল সড়ক উপচে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। ইতোমধ্যে ২ দিনের উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানি অবুঝ প্রাণীর জানমালের সাথে ক্ষত-বিক্ষত করছে ৫ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলকে।
সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার কুদরত উল্লাহ, পেশায় মাছ চাষি। বছরের শুরুতে ধারদেনা করে কয়েক লাখ টাকার মাছ চাষ করেন এই খামারি। কিন্তু আকস্মিক বন্যার পানিতে পুকুরের মাছের সাথে ভেসে যায় তার সকল স্বপ্ন। এখন তিনি কেবল নিঃস্ব, কেবল অসহায়।
কুদরত উল্লাহ বলেন, 'হঠাৎ করে পানি এসেছে। মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যে পানি এসে সব নিয়ে গেছে। মাছ আটকানোর অবস্থা পায়নি।'
কুদরত উল্লার মতো সীমান্ত অঞ্চলের হাজারো মাছ চাষির কণ্ঠে এখন সম্পদ হারানোর সুর, কারো লাখ, কারো বা কোটি টাকার সম্পদ বিনষ্ট হয়েছে এই দুর্যোগে। সিলেট জেলা মৎস্য অফিস বলছে, দু'দিনে প্রায় দেড় কোটি চাষের পোনা আর আনুমানিক ৮শ’ টনের মতো মাছ বন্যায় ভেসে গেছে, যার ক্ষয়ক্ষতি প্রায় ২৫ কোটি টাকার মতো।
মাছ চাষি আরেকজন বলেন, 'বন্যার কারণে আমাদের অনেক এলাকার পুকুরে মাছ ভেসে গিয়েছে। যারা খামারি আছে তাদের প্রচুর পরিমাণে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।'
ঢলের ঘোলা জলে কেবল যে মৎস্য সম্পদই নষ্ট হয়েছে তাই নয় বরং অনেকেই নিজের জমিনের চাষকৃত আউশ ধান, বীজ, নাগামরিচ, কাঁচা মরিচসহ হারিয়েছেন হাজার হাজার একর জমির শাকসবজি ও ফসল।
কৃষক একজন বলেন, 'সব পানিতে ডুবে গিয়েছে। কিছু নেই এখন।'
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে এই অকাল বন্যায় ৫ হাজার ৬০০ হেক্টর জমির উৎপাদিত ফসল বিনষ্ট হয়েছে, যা থেকে উৎপাদিত পণ্যের মূল্য বিবেচনা করলে শুধু কৃষকদেরই ক্ষতি হয়েছে ৪০০ কোটি টাকারও বেশি।
সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ খয়ের উদ্দিন মোল্লা বলেন, 'টোটাল ক্ষতি কি হয়েছে কৃষকের কাছে এটা কিছু না তাদের কাছে অল্প ক্ষতি মানেই বড় ক্ষতি। এই বন্যা যদি দীর্ঘায়িত হয় তাহলে ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যাবে।'
এদিকে জেলা প্রশাসক বলছেন অবকাঠামোগতসহ সার্বিক ক্ষতি নিরূপণ করা না গেলেও বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বলেন, 'জেলা পর্যায় থেকে যা যা করণীয় আমরা তা করে যাচ্ছি। দুর্যোগ মোকাবিলায় যা যা প্রয়োজন দুর্যোগ মন্ত্রণালয় থেকে সহায়তা দেয়া হবে।'
পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির পরিমাণ কিছুটা কমেছে। তবে, পাহাড়ি ঢল বন্ধ হলে বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি ঘটবে।