পরিষেবা
অর্থনীতি

ঢাকার পূর্ব-পশ্চিমকে যুক্ত করবে এমআরটি-৫, ডিসেম্বরে শুরু মূল লাইনের কাজ

হেমায়েতপুরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে বেশ জোরেশোরেই এগিয়ে চলছে ঢাকার পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তকে সংযোগের পরিকল্পিত আরেকটি মেট্রোরেলের কাজ। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডিপোর বাইরে হেমায়েতপুর থেকে আমিনবাজার অংশে এই ডিসেম্বরেই মেট্রোর মূল লাইন নির্মাণের কাজ শুরু হবে। এই লাইনটি তুরাগ নদীর তলদেশ দিয়ে যাবে। ডিএমটিসিএল বলছে, পাতালের ৩টি নির্মাণ প্যাকেজের মধ্যে কচুক্ষেত থেকে নতুনবাজারে সেনানিবাসের নিচের কাজ আগে শুরু হবে। এ প্রকল্পেরও অন্তত ৭টি প্যাকেজ অর্থায়নকারী সংস্থা জাইকার সম্মতির অপেক্ষায় আছে।

ধলেশ্বরীর শাখা নদী সাভারের বিলামালিয়া ও কোন্ডা মৌজা হয়ে তুরাগে মিশেছে, নাম কর্ণতলী। এর পাড়েই ঢাকার আরেকটি মেট্রোলাইন এমআরটি-৫ এর কেন্দ্রবিন্দু।

শহরতলীর প্রায় ১০০ একর প্লাবনভূমির ওপর এই ডিপোর আরেক প্রান্তে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক।

হেমায়েতপুরের এই ডিপো থেকেই উড়াল ও পাতাল মিলিয়ে প্রায় ২০ কিলোমিটার মেট্রো পরিচালিত হবে ভাটারা পর্যন্ত। মোট ১৪টি স্টেশনের ৪টি হবে উড়ালে, ৯টি পাতালে। এটি হবে ঢাকার দ্বিতীয় পাতাল মেট্রো যে লাইনটি প্রথমবারের মত নদীর নীচ দিয়ে যাবে। আমিনবাজার থেকে তুরাগতলের প্রায় ৩০ মিটার গভীরে নির্মিত হবে এই মেট্রো টানেল, মিশবে গাবতলী পাতাল স্টেশনে।

১০টি নির্মাণ চুক্তির মাধ্যমে সম্পন্ন হবে পুরো লাইনটির কাজ। প্রথম নির্মাণ ভাগের ডিপো এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, এই কর্মযজ্ঞের। অপেক্ষাকৃত নীচু এ এলাকায় চলছে জাপানিজ প্রযুক্তির স্যান্ড কমপ্যাকশন পাইলিংয়ের মাধ্যমে ডিপোর ভিত শক্ত করার কাজ। নানা পরীক্ষা নিরীক্ষার পর মেঘনা, শীতলক্ষ্যা থেকে আনা বালুর পাহাড় গড়ে উঁচু করা হচ্ছে জায়গাটিকে। যাতে তা আবার নিচে ভেঙে না পড়ে তার জন্য ভিয়েতনাম থেকে আনা হয়েছে কনক্রিট সিটগুলোকে। দিনরাত দেড়শ' প্রকৌশলী আর আর সাড়ে ৪শ’ নির্মাণ শ্রমিকের ঘামে ডিপোর কাজ চলছে।

সব মিলিয়ে প্রায় দেড়শো' নির্মাণ যন্ত্র দিনরাত কাজ করছে বিস্তীর্ণ এই ডিপোতে এবং গেল ৮ থেকে ৯ মাসে এই যে এখানকার যে অগ্রগতিটা দেখা যাচ্ছে তা কিন্তু আগের চিত্র থেকে বেশ আলাদা। ২ থেকে ৩ ফিটের একটি জলা ছিল, যা বালু দিয়ে ভরাট করে এই উচ্চতায় আনা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এভাবে পুরো এলাকার ভূমি উন্নয়ন করা হবে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কাজের অগ্রগতি ২০ ভাগের কাছাকাছি। কয়েক ধাপের কাজের মধ্যে তারা এখন ডিপোকে এমন পর্যায়ে নিয়ে যেতে চান, যাতে বর্ষায় কাজ বন্ধ না থাকে।

এমআরটি লাইন-৫ ( নর্দান রুট) প্রকল্প পরিচালক মো. আফতাব হোসাইন খান বলেন, 'কংক্রিট সিটের ড্রাইভ কাজ শুরু হয়েছে। চারিদিকে যে ভরাট কাজ করা হয়েছে সেখানে নীচু এলাকায় ভরাট করা মাটি যেন সরে না যায় তার জন্য কংক্রিট সিট ব্যবহার করা হচ্ছে।'

তবে ঢাকার নতুন এই মেট্রো প্রকল্পেও ডিপোর মত অন্যান্য কাজ এগোয়নি। ১০টি নির্মাণ চুক্তির মধ্যে এক্ষেত্রে এগিয়ে আছে, হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা পর্যন্ত অংশে উড়াল লাইন নির্মাণ কাজের প্যাকেজ। এটি ৩ নম্বর নির্মাণ ভাগ এবং এপ্রিল মাসের শুরুর দিকে ঠিকাদারদের প্রাথমিক যোগ্যতা যাচাই শেষে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। বাকি ৮টির মধ্যে এগিয়ে আছে পাতালের তিনটি নির্মাণ প্যাকেজ। এর মধ্যে কচুক্ষেত হতে ভাটারা পর্যন্ত নির্মাণ ভাগটিকে সবচেয়ে অগ্রাধিকার দিচ্ছে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ।

তিনি বলেন, 'আমরা আশা করছি ডিসেম্বরের মধ্যেই ফিজিক্যাল কাজ ধরতে পারবো। বনানী-গুলশান এই এলাকায় প্লাটফর্ম ওপরে নিচে থাকবে।'

মেট্রোরেলের এই লাইনটির জন্যও ঋণ দিচ্ছে জাপানি সহায়তা সংস্থা জাইকা। প্রকল্পটির জন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছে, ৪১ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা যার মধ্যে প্রায় ৩০ হাজার কোটিই দেবে সংস্থাটি। আর এর জন্য এখন পর্যন্ত মেট্রোরেল বাস্তবায়নকারী সংস্থা ডিএমটিসিএলের সঙ্গে ২০১৮, ২০২০, ২০২২ সালে মোট তিনটি ঋণচুক্তি করেছে জাইকা।

ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, 'আমাদের যে স্টেশনগুলো হবে তা ওপেন কাট পদ্ধতিতে হবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে এই কাজ দিয়েছি তারা কাজ শুরু করেছে। এখানে আমরা মনে করছি ৬ মাসের একটা জটিলতা আছে।'

মেট্রোরেলের এই প্রকল্পটি প্রথমবারের মতো ঢাকার পূর্ব এবং পশ্চিম প্রান্তকে এক করে দিবে। আশা করা হচ্ছে ২০২৮ সালের মধ্যে প্রকল্পটি চালু করে দেবার লক্ষ্যমাত্রা। এই মেট্রোরেল চালু হলে প্রায় ১২ লাখ মানুষ যাতায়াতের সুবিধা ভোগ করতে পারবে।

ইএ

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর