শিল্প-কারখানা
অর্থনীতি
0

প্লাস্টিকের দরজার দেশিয় বাজার ৫০০ কোটি টাকার ওপরে

কাঠের দরজার একচেটিয়া বাজারে শক্ত অবস্থান জানান দিচ্ছে প্লাস্টিক ও প্রক্রিয়াজাতকৃত বোর্ডের কপাট। সাশ্রয়ী আর টেকসই হওয়ায় আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনে দরজার পরিবর্তন আনছেন বাসিন্দারা। উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, মাসে লাখ পিসের বেশি দরজা বিক্রি করেন তারা। যার দেশিয় বাজার ৫০০ কোটি টাকার ওপরে।

দরজা যেমন ঘরের ভেতরে ঢোকার পথ। তেমনি কাউকে ঢুকতে না দিতেও তার সমান ব্যবহার। তবে এর বাইেরও ঘর বা বাড়ির স্থপত্য শৈলীতে ভিন্নমাত্রা নিয়ে আসে এই দরজা। সময়ের সঙ্গে রুচির ভিন্নতায় বদলেছে এর নকশা থেকে শুরু করে উপাদান।

অতীতের কারুকাজখচিত কাঠের জায়গা নিচ্ছে পার্টিক্যাল বোর্ড, কাঁচ, লোহা, স্টিল, এমনকি প্লাস্টিক। বাড়ির সব ধরনের দরজার চাহিদা পূরণে সক্ষম বলে ব্যবহারকারীও ঝুঁকছেন ইউপিভিসি ডোর, ফ্ল্যাশ ডোর, উডেন ডোরের মতো পণ্যে। ক্রেতা চাহিদায় নজর রেখে দেশের স্বনামধন্য প্রায় ডজনখানেক প্রতিষ্ঠান তৈরি করছে দরজা।

তেমনি একটি প্রতিষ্ঠান মোস্তফা ডোর। কসমো ডোর, ক্যাবিনেট ডোর, পাওয়ার ডোর, কাবস ডোর, ইকো ফ্রেন্ডলি ডোর ও প্রোসেসড ডোর তৈরি করে আসছে তারা। দরজা তৈরির প্রক্রিয়া এবং এই খাতের আদ্যপান্ত জানতে তাদের কারখানায় যায় এখন টিভি।

পরিমাণমতো উপাদান মিশিয়ে ইউপিভিসি দরজা তৈরির সূচনা করেন মিক্সিং অপারেটর। এরপরের কাজ মিক্সার মেশিনের। প্রায় ১৫ মিনিটের মিশ্রণ এবং কয়েকটি জটিল ধাপ পেরিয়ে আকার আসে দরজার প্যানেলের।

প্রাথমিকভাবে নির্দিষ্ট মাপে কাটবার পরে শুরু হয় প্যানেলের গুণগত মান পরীক্ষা ও অন্যান্য কাজ। পরীক্ষায় কৃতকার্য হলে দরজার পাল্লা পাঠানো হয় পরবর্তী সেকশনে। যেখানে প্রথমে করা হয় প্রিন্টিং, তারপর চলে ফ্রেম বসানো, কলকব্জা সংযুক্তের মতো কাজ।

কাঠের বিকল্প এসব দরজার দেশিয় বাজার ৫০০ কোটি টাকার উপরে। বাথরুম, রান্নাঘর, বারান্দার মতো স্থানভেদে দরজার ডিজাইন ও মানের ভিন্নতার কারণে ইউপিভিসির মতো দরজা ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছে মানুষ। আর কাঠের দরজার তুলনায় সাশ্রয়ী এবং রোদ-বৃষ্টি-আগুনে অধিক টেকসই হওয়াও জনপ্রিয়তার কারণ বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

একজন ব্যবসায়ী বলেন, 'দিনদিন প্লাস্টিকের দরজার উৎপাদন বাড়ছে, বিক্রিও বাড়ছে। আর কাঠের দরজায় প্রসেসিংগুলো ভালোভাবে করতে পারে না। প্লাস্টিকের বোর্ড ঘুনে খায় না, নষ্টও হয় না। আর কাঠ শীতকাল আসলে ফাঁকা হয়ে যায়।'

দেশের চাহিদার ৯০ শতাংশ পূরণ করতে পারলেও রপ্তানিতে পিছিয়ে বাংলাদেশে প্রস্তুতকৃত দরজা। বিদেশিদের চাহিদামাফিক দরজা উৎপাদন এবং এই নতুন ধরনের দরজা উৎপাদনের প্রচেষ্টার বার্তা দেন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।

মোস্তফা ডোরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মোস্তফা মুন্সী বলেন, 'উড এবং প্লাস্টিকের পাউডার দিয়ে মিশ্রণ করে একটা দরজা বানানো হয়। নিঃসন্ধেহে এটা পরিবেশবান্ধব ও দেশের জন্য খুব ভালো। দেশ থেকে অনেক প্লাস্টিক রপ্তানি হলেও দরজাটা একটু কম হচ্ছে। ভারতে আমরা কিছু রপ্তানি করছি, কিন্তু আমরা চাই আরও বেশি দেশে বেশি রপ্তানি করতে।'

পারটেক্স পার্টিকেল বোর্ড লিমিটেডের হেড অব বিজনেস সৈয়দ কাইয়ুম হাসান বলেন, 'প্রতি বছর আমরা ১ লাখ পিছের উপরে দরজা বাজারজাত করছি। এটার মেইন ইউজার হচ্ছে ডেভেলোপার কোম্পানি ও সরকারি প্রজেক্টগুলোতে বেশি ব্যবহার হয়। আমরা খুব আশাবাদি যে আমাদের দেশের চাহিদা আরও বেশি বাড়বে। এর পাশাপাশি দরজা বিদেশেও রপ্তানি করতে পারবো।'

এদিকে কৃত্রিম ও প্রক্রিয়াজাতকৃত কাঠ দিয়ে তৈরি করা দরজার বাজারও দেশে বড় হচ্ছে দিনে দিনে। ৫০ বছরের গ্যারান্টি, আজীবন ঘুনে না ধরা ও দীর্ঘক্ষণ আগুনে সুরক্ষিত থাকার মতো প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন দরজা নির্মাতারা। আর আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে নিজস্ব কাঁচামাল ব্যবহারে সুফল মিলছে কপাট বাণিজ্যে। সরকারের যথাযথ রপ্তানিমুখী পদক্ষেপে এই খাত রপ্তানি পণ্যের শীর্ষ তালিকায় পৌঁছাতে পারে বলে আশাবাদী ব্যবসায়ীরা।

এসএস